তৌফিক জোয়ার্দার (Taufique Joarder) তার বিশ্লেষণধর্মী লেখায় সাম্প্রতিক এনসিপি (NCP)-এর দুর্নীতির খবরে সৃষ্টি হওয়া আলোড়ন এবং এর পেছনের বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। তার মতে, এনসিপির দুর্নীতির খবর এখন যেমন প্রকাশ পাচ্ছে, তেমনি এর প্রতিক্রিয়ায় দলটির আদর্শবাদী সদস্যদের পোস্টগুলোতেও বিব্রত বোধ লক্ষণীয়।
ছোট দলের দুর্নীতি বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়
তৌফিক বলেন, এনসিপি ছোট একটি দল হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দলীয় মারামারির মতো সমস্যায় জর্জরিত। এটি একটি বড় প্রশ্ন তোলে—যদি এমন ছোট দলই এসব সামলাতে না পারে, তাহলে বৃহৎ দলগুলোর (যেমন বিএনপি (BNP)) ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কতটা জটিল হতে পারে?
তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি-র বিরুদ্ধেও গত কয়েক মাস ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্মম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। তবে এরই মাঝে কিছু ভালো হয়েছে—বিএনপি দলের ভেতরে থাকা কিছু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করতে পেরেছে, যা অন্য সময়ে কঠিন হতো। এনসিপির উদাহরণ এতে সাহায্য করেছে।
দল ও সমাজ একে অপরের প্রতিচ্ছবি
তৌফিক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সমাজেরই প্রতিফলন। সমাজে যেমন দুর্নীতি, অপরাধ, ধান্দাবাজি আছে—দলগুলোতেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। খ গ্রুপের দলগুলোর (যেমন বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি) মধ্যে আদর্শিক কাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। তারা মূলত ক্ষমতায় যেতে চায় এবং সেটার জন্য প্রভাব খাটায় ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়।
অন্যদিকে, ক গ্রুপের দলগুলো (যেমন আওয়ামী লীগ (Awami League), জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami), ও কিছু বাম দল) তাদের নিজস্ব আদর্শে সদস্যদের দীক্ষিত করে এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে সেই আদর্শ প্রয়োগ করতে চায়। এজন্য তারা ক্ষমতায় গেলে সেটি হারানোর ভয়ও বেশি অনুভব করে।
সমাজ বদলাবে কবে?
তৌফিক মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমাজ সংস্কারের কোনো দায় নেই। বরং সমাজে যে পরিবর্তন আসে, তারা শুধু সেটার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। সমাজ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, দলও হবে। সমাজ বদলালে দলও বদলাবে। তবে এই পরিবর্তন ধীর, ধৈর্যসাধ্য ও অস্পষ্ট।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, আমাদের সমাজ একটি নয় বরং ভিন্ন দুটি বাস্তবতায় বিভক্ত। শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও গ্রামের মানুষদের মূল্যবোধ, রুচি, চাহিদা, এমনকি বিনোদনের ধরণও ভিন্ন। এই বিভক্ত সমাজে রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই নানা অনৈতিক দাবির মুখোমুখি হন—যা পূরণ করতে গিয়ে তারা নিজেরাও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় নেতাদের মনে হয় তারা সমাজের কাছে একপ্রকার ব্ল্যাকমেইলড।
রাজনীতিতে শুদ্ধতা সম্ভব?
তৌফিক মনে করেন, ১০০% খাঁটি চরিত্র বা নৈতিক শুদ্ধতার ভিত্তিতে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রে ক্ষমতায় যেতে হলে কখনো কখনো বাস্তবতার সাথে আপস করতে হয়। রাজনীতিকে দোষারোপ করতে গিয়ে যদি অতিরিক্ত ঘৃণাবোধ জন্মে, সেটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিতে পারে।
তাই তিনি পরামর্শ দেন, বিরোধিতা অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু তা যেন দায়িত্বশীল হয়। রাজনৈতিক বিরোধিতায় বাস্তবতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে।