এখনো দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান, রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে প্রশ্ন

দীর্ঘ আট মাস ধরে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরও তারেক রহমান (Tarique Rahman) এখনো দেশে ফেরেননি। বিএনপি (BNP)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা।

আইনি জটিলতাই মূল কারণ বলে দাবি বিএনপির

খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন চার মাস আগে। ধারণা ছিল পুত্র তারেক রহমানকে নিয়েই ফিরবেন। কিন্তু ৬ মে তার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান (Zubaida Rahman) ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান (Syeda Sharmila Rahman) ফিরলেও তারেক রহমান আসছেন না।

বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই দেশে ফিরবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেন, “আইনের শাসন ব্যতীত গণতন্ত্র চলবে না… শেখ হাসিনার মতো একটা অর্ডার দিয়ে সব মামলা বাতিল করলেই হবে না।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ (Salauddin Ahmed) আশা প্রকাশ করেন, তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন। যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (Shahid Uddin Chowdhury Annie) বলেন, “কিছু মামলা এখনো পেন্ডিং। লন্ডনেও কিছু রয়েছে।”

‘ওয়ান-ইলেভেন’ মামলার রায়ই প্রধান বাধা?

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক জহিরুল হুদা মামলাটি করেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে জুবাইদার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত রয়েছে।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (Barrister Kaiser Kamal), তারেক রহমানের আইনজীবী, বলেন, “জিয়া পরিবার সংবিধান ও আদালতের প্রতি আস্থাশীল। সব মামলা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি হবে।”

২০০৭ সালে গ্রেপ্তার ও ২০০৮ সালে দেশত্যাগ

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার (Caretaker Government) আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান এবং ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে চলে যান। সে সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

উইকিলিকস (Wikileaks) ফাঁস করা মার্কিন তারবার্তা অনুযায়ী, তারেকের বিদেশ যাত্রা একটি রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ ছিল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত আসে। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, তারেক রাজনীতি থেকে কিছু সময়ের বিরতিতে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও করেছিলেন।

মামলার সংখ্যা ও অভিযোগ

২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮০টির বেশি মামলা দায়ের হয়। কিছু মামলায় অনুপস্থিতিতেই সাজা দেওয়া হয়। বিএনপি মনে করে এসব রায়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা পরে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তি হলেও কয়েকটি এখনো বিচারাধীন।

খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা ও ফেরার প্রস্তুতি

জেল ও মামলার মধ্যে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর ২০২০ সালে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে লন্ডন ক্লিনিক (London Clinic)-এ অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তারেক রহমানের বাসায় যান এবং ঈদ উদযাপন করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) জানান, চিকিৎসায় উন্নতি হওয়ায় খালেদা জিয়া এখন দেশে ফিরতে প্রস্তুত। তিনি ৬ মে কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Qatar Royal Air Ambulance)-এ দেশে ফিরবেন।

নেতৃত্ব সংকট ও তৃণমূলের আকাঙ্ক্ষা

বিএনপির এক তৃণমূল নেতা আব্দুর রহিম বলেন, “নির্বাচন ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তা কাটাতে হলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরতেই হবে।”

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ফেরা না ফেরার সিদ্ধান্ত এখনো রাজনৈতিক বোঝাপড়া, আইনি বাধা ও ব্যক্তিগত অবস্থান এই তিন বিষয়ের মিশ্রণে গঠিত। তারেক রহমানের দীর্ঘ অনুপস্থিতি বিএনপির অভ্যন্তরে ও রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।