ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union)’র রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার (Michael Miller) বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে যাত্রা করার আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাব (National Press Club)-এ ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) (Diplomatic Correspondents Association, Bangladesh (DCAB)) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক রূপান্তর ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনীয়তা
রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, “ইইউ মনে করে, রাজনৈতিক রূপান্তরের এ প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট নির্বাচনের সময়সীমা চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমাদের দৃষ্টিতে, এই রূপান্তরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় এবং স্বাধীনতা দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এই উদ্দেশ্যে “ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিটি” কাজ করছে এবং তাদের সফলতা নির্ভর করবে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার ওপর।
গণঅভ্যুত্থান, জবাবদিহি ও বিচার ব্যবস্থার প্রসঙ্গ
জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন এই বিষয়ে যথেষ্ট স্পষ্ট এবং অপরাধীদের স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।
নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার ও ইইউ’র ভূমিকা
তিনি জানান, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে। ইইউ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজছে এবং এই রূপান্তরের অংশীদার হতে চায়।
জামায়াতে ইসলামির ব্রাসেলস সফর
রাষ্ট্রদূত জামায়াতে ইসলামির সাম্প্রতিক ব্রাসেলস সফর প্রসঙ্গে বলেন, “তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে অন্যান্য দলগুলোরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে।”
রোহিঙ্গা সংকট ও ইউরোপীয় সহায়তা
রোহিঙ্গা (Rohingya) ইস্যুতে মাইকেল মিলার জানান, “রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। আমরা রাজনৈতিক সমাধান চাই এবং কিছু মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তার ওপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।” ২০১৭ সাল থেকে ইইউ প্রায় ৫০ কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছে, তবে বর্তমানে সহায়তা কমছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীল করতে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
মানবিক করিডোর ও অর্থপাচার প্রসঙ্গ
মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য একটি কার্যকর “মানবিক করিডোর” গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। অর্থপাচার প্রসঙ্গে বলেন, ইইউ নয়, বরং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিচার বিভাগ এই বিষয়গুলো তদন্ত করে থাকে এবং যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সম্পর্কের ভিত্তি হবে মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। “বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে—এটি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সুশীল সমাজকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি বড় সুযোগ,” বলেন মাইকেল মিলার। তিনি চান, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যেন পানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।