ভুয়া কাগজে বাংলাদেশের এনআইডি: ভারতীয় দুই ভাইয়ের চাঞ্চল্যকর নাগরিকত্ব জালিয়াতি

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা-তে ভয়াবহ এক নাগরিকত্ব জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামের দুই ভাই ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানবজেন্দ্র নাথ রায় বাংলাদেশের নাগরিক সেজে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করেছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো—বজেন্দ্র নাথের ছেলে ভারতের আধা-সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস-এ কর্মরত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বোদার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সেজে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের যাবতীয় কাগজ তৈরি করেছেন। অথচ স্থানীয়দের দাবি, তারা কখনো ওই এলাকায় বসবাস করেননি। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ মিলেছে আধার কার্ড ও ভোটার আইডি থেকে। ভবেন্দ্রের আধার নম্বর ৪৪১৭০৩৯৫৪৩৯৪ ও ভোটার নম্বর WB/03/015/222490 এবং বজেন্দ্রের আধার নম্বর ৬৪৬৭২৫৮০৯৪৩৪ ও ভোটার নম্বর JLG3534427। বাংলাদেশের এনআইডিতে ভবেন্দ্রের নম্বর ১০৪৬৭৪৬২২৬, জন্ম সনদ নম্বর ১৯৫৪৭৭১২৫৮০০১৩৯৭২ এবং বজেন্দ্রের এনআইডি নম্বর ৭৩৭৯১১৩০৭৪, জন্ম সনদ নম্বর ১৯৫৭৭১২৫৮০০১৪০২০।

তারা এই পরিচয়ের মাধ্যমে দেবীগঞ্জের টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ওয়ারিশ সনদও সংগ্রহ করেছেন, এমনকি পাসপোর্ট আবেদন ও মোবাইল সিম কার্ডও গ্রহণ করেছেন। কাগজপত্র যাচাইয়ে উঠে এসেছে, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও হোল্ডিং নম্বর অন্য ব্যক্তির নামে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকানার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজ উদ্দিন জানান, তার নাম ব্যবহার করা হলেও তিনি কোনো আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেননি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি জানার পর এনআইডি বাতিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক-কে চিঠি পাঠানো হয়।

বোদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তকদির আলী সরকার জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে এনআইডি বাতিলের আবেদন পাঠানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে সাংবাদিক পরিচয়ে বজেন্দ্র নাথকে ফোন করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, “আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে যা আছে সেটাই ঠিকানা, জানতে হলে সরকারের কাছে যান।” এরপর তিনি কল কেটে দেন। ভবেন্দ্রের নম্বরে ফোন করলে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ভবেন্দ্রের পক্ষে আদালতে একটি মামলা দেখাশোনা করছেন।

এই ঘটনা শুধু একটি জালিয়াতির নজির নয়, বরং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গভীর দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।