সাংবাদিক ও কলাম লেখক রাজিব আহমেদ (Rajib Ahamod) এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতেই দেশে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং সেই ভয়াবহ অনিয়মের খবর সাংবাদিকরা জানলেও তা প্রকাশ করেননি। কলামটিতে তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং পেশাগত সৎ সাহসের অভাবের সমালোচনা করেন।
রাতের ভোট ও সাংবাদিকদের নীরবতা
লেখক জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন কেন্দ্রে আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে তার কাছে খবর এলেও দেশের গণমাধ্যমে সে রাতের কোনো খবর প্রকাশ হয়নি। ডিজিএফআই, এনএসআই ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণেই এই নীরবতা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংঘবদ্ধ অপরাধ ছিল ওই রাতের ভোট।” তার মতে, সেই নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হলে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক বিরল সুযোগ পেতেন। কিন্তু রাতের ভোট দেশকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
রাজনৈতিক পক্ষপাত ও সাংবাদিকদের ভূমিকা
রাজিব আহমেদ উল্লেখ করেন, অনেক সাংবাদিক দলীয় পদ গ্রহণ করে পেশাগত নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ (Awami League) ‘মিডিয়া কমিটি’ গঠন করলে বহু সাংবাদিক তাতে যুক্ত হন, যা সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী।
তিনি রুয়ান্ডার গণহত্যার উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে সাংবাদিকদের উস্কানির কারণে তারা আজীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরও কি তাদের মতো জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত নয়?
সাংবাদিকতা নাকি প্রচারযন্ত্র?
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, ক্রসফায়ার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা নীরব থেকেছেন বরং তা সমর্থন করে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। টকশো হোস্টরা বিরোধীদের চরিত্রহননে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি উদাহরণ দেন Zulkarnain Saer-এর চরিত্রহননের, যেখানে আলজাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপপ্রচার চালানো হয়।
মিথ্যা সংবাদ ও স্বার্থান্বেষী রিপোর্ট
বর্তমান সময়ের কিছু গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও যাচাই-বাছাইহীন সংবাদের কথাও লেখক তুলে ধরেন। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ (Faruk Ahmed) এর বিরুদ্ধে প্রকাশিত ১২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এবং অপর একটি এপিএসের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগের কোনো প্রমাণ ছাড়া প্রকাশকে সাংবাদিকতা নয়, বরং প্রোপাগান্ডা হিসেবে অভিহিত করেন।
সাংবাদিকতা নয়, বিচারের দাবি
রাজিব আহমেদ মনে করেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর সাংবাদিকতার নামে যারা ক্ষমতাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নয়, বিচারের পথেই হাঁটা উচিত। তাদের অপরাধ সাংবাদিক পরিচয়ে আড়াল করা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, “পেশাগত পরিচয়ে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকলে, সাংবাদিকতা আর থাকবে না। সবাই লাইন ধরে সরকারের কোলে উঠবে। জবাবদিহিহীন সরকার আবার স্বৈরাচার হবে।”