শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ভারতে পালিয়ে গিয়েও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য ও নির্দেশনার জেরে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা এখন নতুন করে বিপদের মুখে পড়েছেন। সারাদেশে গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। দলের অভ্যন্তরে বাড়ছে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি।
ঝুঁকির মুখে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা
গত এপ্রিলে একটি ভার্চুয়াল আলোচনায় শেখ হাসিনা কর্মীদের প্রতি বলেন, ‘এক গালে চড় মারলে আরেক গাল পেতে দেওয়ার সময় শেষ। যারা আমাদের ওপর আঘাত করেছে, তাদের জবাব দিতে হবে।’ এরপর থেকেই দেশজুড়ে মিছিল ও ক্ষোভপ্রকাশ শুরু হয়। ঢাকার ধানমন্ডি-৩২ (Dhanmondi 32), সুধাসদন (Sudhasadan) এবং অন্যান্য স্থানে হামলা ও ভাঙচুর ঘটে।
তবে এতে নেতাকর্মীদের বিপদ আরও বেড়েছে। গ্রেফতার এড়াতে অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। যারা এলাকায় কৌশলে টিকে ছিলেন তারাও এখন আতঙ্কে।
দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনা নিরাপদে বিদেশে বসে কর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, পরিবারসহ দেশ ত্যাগের পেছনে ছিল পূর্ব পরিকল্পনা। একজন নেতা বলেন, ‘আরেকটু আগে জানলে আমরাও পালাতে পারতাম।’
বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাওয়া নেতারা জানেন তারা অপরাধ করেছেন, এবং আইনের বিচারে তাদের সাজা হবে। তারা রাজনীতিতে ফিরে আসতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও যেতে পারেন।
কৌশলগত রাজনীতিতে বিভ্রান্তি
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ-উর রহমান (Dr. Zahed-Ur-Rahman) জানান, ঝটিকা মিছিলের পেছনে থাকা অনেকেই মূলত অর্থের বিনিময়ে মাঠে নামছেন। এতে সাধারণ নেতাকর্মীরা বিপদে পড়ছেন, বিশেষ করে যারা আগে শাস্তি পেয়ে নিরব ছিলেন।
তার মতে, আওয়ামী লীগ এখন এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেখাতে চাইছে যে, তারা নিষিদ্ধ দল নয় এবং সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী মাঠে আছে। তবে এটি আসলে নিরাপদে বিদেশে থাকা নেতাদের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি।
বিদেশ থেকে নির্দেশনা ও কর্মসূচি
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি, চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’ আরও একাধিক ভার্চুয়াল বার্তায় তিনি বলেন, ‘যে যেখানে আছো, তুমিই সেখানকার নেতা।’
এই বক্তব্যের পর ঢাকাসহ চট্টগ্রাম (Chattogram), খুলনা (Khulna), রাজশাহী (Rajshahi), সিলেট (Sylhet) সহ বিভিন্ন জেলায় রাতের বেলা ঝটিকা মিছিল হয়। এই মিছিলগুলোর ভিডিও হাইকমান্ডে পাঠানো হয়, যা পরবর্তীতে দলের অফিসিয়াল পেজে প্রচার করা হয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন নেতাকর্মীরা রাজপথ নয়, পালানোর পথ খুঁজছেন।