জনগণের ব্যালটের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার: মুশফিকুল ফজল আনসারী

মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী (Mushfiqul Fazal Ansari) বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জনগণের ব্যালটের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা। সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন সরকার জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছে এবং এই পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাই হবে মূল লক্ষ্য।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভোটই মুখ্য

আনসারী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এই অবস্থায় আমাদের চাচ্ছে। আমাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগোতে হবে। এটি সরকারের একটি মুখ্য অগ্রাধিকার। এমনকি সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রফেসর ইউনূস দীর্ঘ মেয়াদে ভোটবিহীন শাসনের পক্ষে নন। বরং, তার মতো একজন অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয় কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত—ভোটের পরেও।”

প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী ছায়া এখনও রয়ে গেছে

সাক্ষাৎকারে প্রশাসনের অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আনসারী বলেন, “আগস্ট বিপ্লবের পরেও অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। ফলে অনেক ভালো কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, “প্রশাসনের মধ্যে এখনো ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার বহুস্তরে বসানো মানুষদের ছায়া রয়ে গেছে। যাদের অনেকেই নিজেরা সুবিধা নেওয়ার জন্য সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করেছে।”

তিনি বলেন, “এই ধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের অন্তর্ভুক্তি বন্ধ করা জরুরি। অনেকে অনিচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু কেউ কেউ স্বেচ্ছায় করেছেন। এই পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে।”

‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে

মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন ‘কে কার দোসর’ তা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ কাউকে ছবি বা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করছে। আবার সত্যিকারের দোসররাও অন্যকে দোষ দিয়ে নিজেদের আড়াল করছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের লোকজন সবক্ষেত্রে সফল—তা বলা যাবে না, তবে আমি মনে করি, তারা অনেক কিছু বিবেচনায় রেখে কাজ করছে।”

রাষ্ট্রদূতের অতীত ও আন্তর্জাতিক ভূমিকায় উজ্জ্বল উপস্থিতি

প্রসঙ্গত, মুশফিকুল ফজল আনসারী জাতিসংঘ (United Nations) ও হোয়াইট হাউসে (White House) বাংলাদেশ (Bangladesh)ের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচন জালিয়াতির প্রসঙ্গ নিয়মিতভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম (Just News BD) নামক অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক এবং জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ইউএনবি (UNB), বিশ্বব্যাংক (World Bank), দ্য টাইমস (The Times) ও সানডে টাইমস (Sunday Times) এ কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসলে জাতীয় প্রেস ক্লাব (National Press Club) এ সাংবাদিকরা তাকে সংবর্ধনা দেন।