বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ এখনও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ

আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরাতে সক্রিয় হয়েছে। এই লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে টাস্কফোর্স এবং মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission – ACC)। কিন্তু আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও বিদেশে কোনো সম্পদ এখনও কার্যত জব্দ বা অবরুদ্ধ করা যায়নি।

সম্পদের তালিকা ও আদালতের আদেশ

দুদক আদালতের মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের বিদেশে থাকা শত শত সম্পদ ফ্রিজের আদেশ পেয়েছে। যেমন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামান-এর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি জব্দের আদেশ রয়েছে। এছাড়া, সালমান এফ রহমান-এর ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান-এর লন্ডনে বাড়ি এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান-এর দুবাইয়ের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।

আজিজ খান ও তার পরিবারের নামে সামিট গ্রুপ-এর লুক্সেমবার্গের কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত ৫৬ কোটি টাকার সম্পদও আদালতের আদেশে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে চৌধুরী নাফিজ সরাফত-এর নামে দুবাইয়ে একাধিক ফ্ল্যাট ও ভিলা জব্দ করা হয়েছে।

প্রধান প্রতিবন্ধকতা: আইনি জটিলতা ও প্রক্রিয়ার দীর্ঘতা

যদিও দেশি আদালতের আদেশ রয়েছে, কিন্তু বিদেশে সেগুলো কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলার মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হয়। আদালতের রায়ে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সেই দেশের আইনি কাঠামোর আওতায় সম্পদ জব্দ করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

দুদক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৭১টি দেশে এমএলএআর (Mutual Legal Assistance Request) পাঠানো হয়েছে এবং ২৭টি দেশ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে। যদিও ২০১২ সালে একবার মাত্র ১৩.৫ কোটি টাকার সম্পদ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।

জড়িতদের তালিকায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, বিদেশে সম্পদ পাচারের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব ববি, ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, ও আজমিনা সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগের প্রায় ১৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

টাস্কফোর্স পুনর্গঠন ও চুক্তির উদ্যোগ

সম্প্রতি বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গভর্নরকে। সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ সহ একাধিক সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০-১২টি দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হলে কিছু পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব হবে।