মাওলানা রইসউদ্দিন হত্যার বিচার না করার পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে ডা. জাহেদের উদ্বেগ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান (Dr. Zahedur Rahman) বলেছেন, মাওলানা রইসউদ্দিন (Raisuddin) হত্যার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, সরকার হয় এই ধরনের হামলাকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগাতে চায়।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, রইসউদ্দিনকে শিশু বলাৎকারের অভিযোগে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয় এবং সেই দৃশ্য ভিডিও করা হয়। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও সেদিন রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা গেলেও কোনো দৃশ্যমান বিচার বা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা

ডা. জাহেদ বলেন, “ধরে নিলেও যে তিনি অপরাধী ছিলেন, তবুও তাকে পিটিয়ে হত্যা করা আইনবিরুদ্ধ ও বর্বরোচিত কাজ।” তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার পেছনে রইসউদ্দিনের ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যই মূল কারণ। তিনি ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত (Ahle Sunnat Wal Jamaat) নামক মাজারকেন্দ্রিক ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ইসলামের বিভিন্ন মতপার্থক্য থাকলেও, তা নিয়ে সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, এক ধর্মীয় নেতা আরেকজনকে কাফের বলছেন। এই অসহিষ্ণুতা থেকে জন্ম নিচ্ছে নির্মমতা।”

সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারে বিলম্ব

ডা. জাহেদ জানান, ২৭ এপ্রিল রইসউদ্দিন হত্যাকাণ্ড ঘটলেও মামলা নেওয়া হয়েছে কয়েকদিন পর, তা-ও ব্যাপক চাপের মুখে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সংগঠনের অনুসারীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রা, অবরোধ, কর্মসূচি পালন করছেন, অথচ সরকার নির্বিকার।” তিনি জানান, সংগঠনের দাবি—এই হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত, যার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় শত্রুতা।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০০টির বেশি মাজার ভাঙচুর হয়েছে, কিন্তু সরকার কোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। এমনকি ওরস চলাকালেও হামলার শিকার হয়েছেন মাজারপন্থীরা। তিনি মনে করেন, এ ঘটনাগুলো সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করছে বা কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।

বিচারের অভাবে সমাজে বর্বরতা বাড়বে

তিনি বলেন, “এই রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন সংগঠনের সদস্যদের নিজেদের রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।” তিনি বারবার সতর্ক করেছেন, সুনির্দিষ্ট ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, এই ধারা চলতে থাকবে।

শেষে ডা. জাহেদ বলেন, “রাষ্ট্র নিজে থেকে বিচারের উদ্যোগ না নেওয়াটা প্রমাণ করে, এটা গণতান্ত্রিক চর্চার চরম ব্যর্থতা। যখন বিচার চাইতেও হরতালের ডাক দিতে হয়, তখন সেটা সরকারের জন্য অশনিসঙ্কেত।”