অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ: ‘গাড়ি চলছে হেলে দুলে’ মন্তব্য ফারুক হাসানের

গণঅধিকার পরিষদ (Gonoadhikar Parishad)–এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান (Faruk Hasan) অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “গাড়ি চলছে হেলে দুলে, কিন্তু গন্তব্য কোথায়—তা কেউ জানে না।” সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি সরকারের সদিচ্ছা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

গণহত্যার বিচার প্রশ্নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা

ফারুক হাসান বলেন, “গণহত্যার বিচার নিয়ে সরকার শুধু ‘রেড নোটিশ’, ‘ইন্টারপোল’ ইত্যাদির কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।” তিনি উল্লেখ করেন, নয় মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি।

তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে তৎকালীন সরকার দুটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল। এখনকার ভয়াবহ গণহত্যার বিচার করতে গিয়ে কেন শুধু একটি ট্রাইব্যুনালের উপর নির্ভর করা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।”

মানবিক করিডর নিয়ে উদ্বেগ

সম্প্রতি আলোচনায় থাকা “মানবিক করিডর” প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি সংবেদনশীল অঞ্চল। সেখানে মিয়ানমারের জন্য করিডর খুলে দেওয়া ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।”

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি প্রসঙ্গে সতর্কতা

ফারুক হাসান জাতিসংঘের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ এখন পশ্চিমা আধিপত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মানবিক করিডরের নামে অতীতে ফিলিস্তিনের গাজায় যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন বাংলাদেশে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সংস্কার কমিশনের গঠন নিয়েও সমালোচনা

নারী সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনের সদস্য নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই কমিশনগুলোর সদস্যদের অনেকেই কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞানসম্পন্ন। বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া কোনো সংস্কার টেকসই হতে পারে না।”

রাজনৈতিক ঐকমত্য ও জনগণের অংশগ্রহণের প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ফারুক হাসান বলেন, “যদি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা অবশ্যই জনগণের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিতে হবে। অন্যথায়, তা জনগণ মেনে নেবে না।”