কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে কথিত ‘জঙ্গি অভিযান’-এর নামে ৯ তরুণ হত্যার ঘটনায় মুখ খোলেননি পুলিশের তিন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা। তারা হলেন: সাবেক আইজিপি শহীদুল হক (Shahidul Haque), সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া (Asaduzzaman Mia) এবং মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লা (Jasim Uddin Molla)।
তদন্তে ফের সময় ও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
বুধবার (৭ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করা হলে আদালত পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, শহীদুল হককে ২৫ মে, আছাদুজ্জামান মিয়াকে ২৭ মে এবং জসিম উদ্দিন মোল্লাকে ২৯ মে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা। একইসঙ্গে প্রসিকিউশনের আবেদনে এই মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য ট্রাইব্যুনাল আরও দুই মাস সময় বৃদ্ধি করে।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ও গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর গত ২৪ মার্চ এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম (Tajul Islam) আদালতে জানান, তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে এই তিন কর্মকর্তার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় ২০১৬ সালের কল্যাণপুর অভিযানে ৯ তরুণকে হত্যা করা হয়।
তাজুল বলেন, “জঙ্গি তকমা দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণদের ধরে এনে জাহাজবাড়িতে হত্যা করা হয়। ইসলামি ভাবধারার মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করতে এবং শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) সরকারকে টিকিয়ে রাখতেই এই ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড। তৎকালীন সরকার ক্রসফায়ার বাদ দিয়ে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি চালু করে।”
২০১৬ সালের অভিযান: ‘জাহাজবাড়ি’ অভিযানের পটভূমি
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই গুলশান হামলার মাত্র ২৫ দিন পর কল্যাণপুর (Kallyanpur) এলাকার ৫ নম্বর সড়কের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির নাম ছিল ‘তাজ মঞ্জিল’, তবে আকৃতির কারণে স্থানীয়রা একে ‘জাহাজবাড়ি’ নামে ডাকতেন।
অভিযান শেষে নিহত হয় ৯ তরুণ। একজন আহত অবস্থায় আটক হন এবং একজন পালিয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে, তারা সবাই নব্য জেএমবি (Neo-JMB) সদস্য ছিলেন।
মামলা ও বিচারাধীন অবস্থা
২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার (Mirpur Model Thana) পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয় এবং তা বর্তমানে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।