জুলাই বিপ্লবে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় বেরোবির সাবেক ছাত্রনেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Begum Rokeya University)–এ জুলাই বিপ্লব চলাকালে শহীদ হওয়া ছাত্র আবু সাঈদ (Abu Sayeed) হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পোমেল বড়ুয়াসহ (Pomel Barua) আট পুলিশ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাসহ মোট ৭১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার (৭ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশীদ (Harun-ur-Rashid) এ মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাজহাট থানা (Tajhat Police Station)–এর অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম সরদার (Shah Alam Sardar)।

মামলার আসামির তালিকায় পুলিশ, শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পোমেল বড়ুয়াকে। অন্য আসামিরা হলেন ডিসি আবু মারুফ হোসেন, এডিসি শাহানুর আলম পাটোয়ারি, এসি আল আমরান হোসেন, সাবেক ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং আরিফুজ্জামান

এছাড়াও মামলায় নাম এসেছে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, উপ-রেজিস্ট্রার তৌহিদুল উসলাম জনি, সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেনসহ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সহ-সভাপতি বিধান বর্মন, ফজলে রাব্বি, মমিনুল হক, মাহফুজুর শামিম, মাসুদুল হাসান, শাহিদ হাসান সিদ, ইমরান চৌধুরী আকাশ, ধনঞ্জয় কুমার টগর, পিপাস আলী, বাবুল হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় রায়, সাব্বির হোসেন রিজান, মোশাররফ হোসেন, মানিক চন্দ্র, সিয়াম আরাফাত, আরাফাত রহমান আবির, শোয়াইবুল ইসলাম সাল্লু, আব্দুল্লাহ আল রায়হান, অমিত হাসান, মাহমুদুর রহমান হৃদয়, আরিফুজ্জামান ইমন, গাজিউর রহমান, রিফাত হোসেন, তানভির আহম্মেদ, আরিফ হোসেন, নাফিউল ইসলাম, আবু সালেহ নাহিদ, বায়েজিদ মোস্তাকিম প্রমুখ।

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারাও মামলার তালিকায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রংপুর জেলা যুবলীগের (Rangpur District Jubo League) সাধারণ সম্পাদক মেহেদী সাহান সিদ্দিকী রনি, তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, যুবলীগ নেতা শিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আতিকুল বারি জামিন, ছাত্রলীগ নেতা ইশাক রিজন, সায়িব বিন আশরাফ আনন্দ, জাকির মুসা ও নয়ন প্রমুখ।

শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু এবং তদন্ত প্রতিবেদন

এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা জানান, ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার দুই হাত প্রসারিত করে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে শহীদ হওয়ার ভিডিও দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী (Dr. Shawkat Ali) জানান, ৫ আগস্টের পর ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের পর আন্দোলন দমন ও তাণ্ডবের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে ৭১ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

তিনি বলেন, “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েই এই মামলা করেছি।” অভিযুক্তদের যথাযথ বিচারের দাবি জানান তিনি।