লেখক, গবেষক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর (Badruddin Umar) সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman) সপরিবারে নিহত হওয়ার পর জনগণের মধ্যে কোনো শোক প্রকাশ দেখা যায়নি; বরং রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তার শাসনামলে জনগণের ওপর শোষণ ও নিপীড়ন এতটাই চরমে উঠেছিল যে, সেই হত্যাকাণ্ডে জনগণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে উল্লাসের মাধ্যমে।
শেখ মুজিবের শাসনকাল ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
বদরুদ্দীন উমর এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান বিপুল সংবর্ধনা পেলেও, ১৫ আগস্ট তার মৃত্যুর সময় জনগণের কাছ থেকে কোনো সমর্থন দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিবের পক্ষে রাস্তার একটি কুকুরও দাঁড়ায়নি”। বরং উল্লাসে মানুষ রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করেছে।
আওয়ামী লীগের শাসন নিয়ে কঠোর সমালোচনা
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ (Awami League) ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতে বসে তথাকথিত নেতৃত্ব দিয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতার পর আড়াই বছরের শাসনে জনগণ কিছুই পায়নি। ১৯৭২ সালে রক্ষীবাহিনী গঠন করে এবং নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উমর। এতে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রশ্ন
৭১-এর চেতনা বিষয়ে জানতে চাইলে উমর বলেন, “চেতনা বলতে কী বোঝায়? কার চেতনা? কীসের চেতনা?” তার মতে, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশ নিলেও তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট চিন্তার ধারা ছিল না। তিনি বলেন, “শেখ মুজিব পাকিস্তানের জেলে বসে ছিলেন, লড়াই করেননি। আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও লড়াইয়ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।” এ সময় কৃষক-শ্রমিক ও মধ্যবিত্তরা প্রকৃতভাবে লড়াই করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জনগণের ধারণা ছিল স্বাধীনতার পর শোষণ-নিপীড়ন দূর হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং বিশেষ শ্রেণির লোকেরা বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছে, সাধারণ মানুষ বঞ্চিতই থেকেছে। এই বাস্তবতা থেকেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।