২০০৯ সালের পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলায় বৃহস্পতিবার (৮ মে) আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) জাহিদি আহসান হাবিব (Major (Retd.) Zahidi Ahsan Habib)। তিনি দাবি করেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় এক পর্যায়ে ফজলে নূর তাপস (Fazle Noor Taposh) এমপির নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়, যাতে বিডিআরের নেতৃত্ব পরিবর্তন ও সেনাবাহিনীর পিলখানা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে সাহারা খাতুন (Sahara Khatun), জাহাঙ্গীর কবির নানক (Jahangir Kabir Nanak), মির্জা আজম (Mirza Azam) এবং মাহবুব আরা গিনি (Mahbub Ara Gini) উপস্থিত ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিবরণ
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন (Borhan Uddin) জানান, সাক্ষী মেজর (অব.) হাবিব বলেন, “ঘটনার দিন সকালে দরবার হলে অস্ত্রধারী সিপাহি মইন ও কাজল প্রবেশ করে। মইন গুলি করতে চায়, কিন্তু ব্রিগেডিয়ার বারি তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। এরপর দরবার হলের বাইরে থেকে গোলাগুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। আমরা ভীত হয়ে আশ্রয় নিই, মোবাইল ফোনে সাহায্য চাই। কিন্তু জেনারেল তারেক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন কেটে দেওয়া হয়।”
হাসিনার হাউসগার্ডকে ফোন
তিনি বলেন, “আমি মেজর মইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। শাকিল স্যার তখন হাসিনার সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং বলছিলেন কিছু সৈনিক সন্ত্রাসী কাজ করছে, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।”
আক্রমণের বিবরণ
তিনি বলেন, “১০-১২ জন সৈনিক দরবার হলে প্রবেশ করে। আমি পরিচয় দিয়ে তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাই। কিন্তু একজন সৈনিক আমার পেছনে গুলি করে, পড়ে যাই। আমাকে চ্যাংদোলা করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়। সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম আমাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন।”
তাপসের নেতৃত্বে মিটিংয়ের কথা
বিকেলের দিকে সৈনিকরা কিছুটা শান্ত হলে একটি বৈঠক হয় বলে দাবি করেন মেজর হাবিব। তিনি বলেন, “বৈঠকটি রাইফেল স্কয়ার (Rifle Square) এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিডিআরের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। ফজলে নূর তাপস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং বলা হয়, সেনাবাহিনী পিলখানা থেকে চলে যাবে এবং তাপস এমপি কিছু সময়ের জন্য বিডিআরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ওই বৈঠকে সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও মাহবুব আরা গিনিও উপস্থিত ছিলেন বলে শুনেছি।”
এই সাক্ষ্যের ফলে বহুল আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এবং আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে রাজনীতিকদের সংশ্লিষ্টতা।