রাতভর নাটকীয়তার পর নারায়ণগঞ্জ (Narayanganj) সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ (Awami League)–এর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (Dr. Selina Hayat Ivy)–কে শুক্রবার ভোরে দেওভোগের চুনকা কুঠির থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা (Siddhirganj Police Station)–এ দায়ের হওয়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাশিমপুর কারাগারে (Kashimpur Jail) পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন ও গুঞ্জন
আইভী দীর্ঘ আট মাস নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও হঠাৎ করে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নেতাদের দাবি, সরকার চাইলে আগেই গ্রেপ্তার করতে পারত, যা অন্য শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে করেছে। এদিকে গুঞ্জন রয়েছে, আব্দুল হামিদ (Abdul Hamid)–কে আহ্বায়ক এবং আইভীকে সদস্য সচিব করে ‘রিফর্ম আওয়ামী লীগ’ গঠনের পরিকল্পনার পরই এই গ্রেপ্তার।
গ্রেপ্তারের সময় বিক্ষোভ
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর পুলিশ তার বাড়িতে গেলে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে মানুষ জড়ো হয় এবং চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে আইভী জানিয়ে দেন তিনি রাতের বেলা যেতে চান না। অবশেষে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালতে হাজির ও কারাগারে প্রেরণ
নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদির (Judge Moin Uddin Kadir)–এর আদালতে হাজির করা হলে তিনি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ২৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আইভীর বক্তব্য
আইভী অভিযোগ করে বলেন, “আমাকে ষড়যন্ত্র করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো অপরাধ না করেও কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই আমাকে তুলে নেওয়া হলো।” তিনি আরও বলেন, “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার কারণে যদি আমি অপরাধী হই, তাহলে আমি সে অপরাধে দণ্ডিত হতে রাজি।” নারায়ণগঞ্জে ২১ বছর জনগণের সেবা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এলাকাবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান।
গাড়িবহরে হামলা ও আহত
আইভীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিবি রোডের (BB Road) কালীর বাজার মোড়ে পুলিশের গাড়িবহরে ইটপাটকেল ও ককটেল হামলা হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন।
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
আইভীর গ্রেপ্তারে নিন্দা জানিয়েছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ (Shontrash Nirmul Taqi Mancha)–এর আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি (Rafiqul Rabbi)। তিনি বলেন, “যে শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর সম্পর্ক ছিল না, তার সঙ্গে নিয়ে হত্যা করেছে—এই অভিযোগ হাস্যকর।”
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট (Narayanganj Cultural Alliance)–এর সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল (Dhiman Saha Jewel) বলেন, “আইভী দুর্বৃত্তশক্তির বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদ করেছেন, তাকে গ্রেপ্তার অযৌক্তিক।” গণসংহতি আন্দোলন (Gonoshonghoti Andolon)–এর জেলা সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সুজন (Torikul Islam Sujon) বলেন, “আইভী দমন-পীড়নের রাজনীতি করেননি। বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলার আশ্রয় নেননি।”