শাহবাগ (Shahbagh)—যেখানে এক সময় কথিত ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল, সেখানেই ঘটল তার পতন। শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League)–কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন (Anti-Terrorism Act) প্রয়োগ করে সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত
রাত ৮টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা (State Guest House Jamuna)–তে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূস (Professor Muhammad Yunus)।
আইন উপদেষ্টার বিবৃতি
বৈঠক শেষে ‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি’ পাঠ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (Asif Nazrul)। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল এখন রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন কিংবা সমর্থকদের শাস্তি দিতে পারবে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জুলাই আন্দোলন (July Movement)–এর নেতাকর্মীদের সুরক্ষা এবং ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য দলের কার্যক্রম সাইবার স্পেসসহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন পরবর্তী কার্যদিবসে জারি করা হবে। এছাড়াও, জুলাই ঘোষণাপত্র ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
অতীতের প্রেক্ষাপট: শাহবাগ আন্দোলন ও সমালোচনা
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আলোচিত ও সমালোচিত শাহবাগ আন্দোলন (Shahbagh Movement)–কে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ রূপ প্রকাশ পেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেসময় দৈনিক আমার দেশ (Daily Amar Desh) সংবাদপত্র শাহবাগের আন্দোলনের সমালোচনায় খবর প্রকাশ করায় সরকার তাদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালায়। পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান (Mahmudur Rahman) হয়রানির শিকার হন এবং পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট
এর আগে, ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs) একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League)–কে নিষিদ্ধ করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি (National Citizens’ Committee) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement)–এর দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।