২০১৬ সালের ১০ মে রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (Motiur Rahman Nizami)-র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ ([Awami League]) সরকার। নয় বছর পর, একই তারিখে ২০২৫ সালের ১০ মে রাতে সেই আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
নয় বছর আগের ঘটনা
২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ([Dhaka Central Jail]) রাত ১২টা ১০ মিনিটে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি তা নেননি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ([Asaduzzaman Khan]) গণমাধ্যমে জানান, নিজামী প্রাণভিক্ষা চাননি বলেই রায় কার্যকর করা হয়।
তবে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তুরস্ক ([Turkey]) এই ঘটনায় সবচেয়ে সরব ছিল। সেই সময় দিল্লিতে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার ([Dr. Burak Akcapar]) বলেছিলেন, নিজামীকে তারা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে দেখে এবং তার ফাঁসি কার্যকর করায় তারা ক্ষুব্ধ। এই ঘটনার প্রতিবাদে তুরস্ক ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ([Recep Tayyip Erdogan]) এই ফাঁসির তীব্র নিন্দা জানান।
নয় বছর পর আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণা
নয় বছর পর, একই রাতে দেশের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ([Awami League]) সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাকর্মীদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ([International Crimes Tribunal]) আইনে সংশোধনীও অনুমোদিত হয়। সংশোধনী অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল এখন রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন কিংবা সমর্থকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ([Asif Nazrul]) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ([Awami League]) ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম, এমনকি সাইবার স্পেসেও, নিষিদ্ধ থাকবে। দেশের নিরাপত্তা, জুলাই আন্দোলন ([July Movement]) কর্মীদের সুরক্ষা এবং ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এছাড়াও, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে।