সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছে একটি দুষ্টচক্র, যারা মনে করেছিল বাহিনী মাঠ থেকে সরে যাবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়েছে, বাহিনীগুলো আরও ৬০ দিন মাঠে থাকবে। মাঠ থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করে ‘ঘটনার আয়োজন’ ছিল তাদের—এই তথ্য সরকারের কাছে ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যাপস্টোন কোর্স ও সেনাপ্রধানের বার্তা
মিরপুর সেনানিবাসে ([Mirpur Cantonment]) অনুষ্ঠিত ‘ক্যাপস্টোন কোর্স ২০২৫/১’ ([Capstone Course]) উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ([Bangladesh Army]) প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ([General Waker-Uz-Zaman]) সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কৌশলগত নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিন সপ্তাহব্যাপী এই কোর্সে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদরা অংশ নেন।
জেনারেল ওয়াকার আশা প্রকাশ করেন, ফেলোরা সৃজনশীলতা, সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও জনসেবামূলক মনোভাব নিয়ে দেশ গঠনে কাজ করবেন। তিনি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন—”সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের তরে।”
সেনা ম্যাজিস্ট্রেসির বাস্তবতা ও প্রয়োগ
গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী মাঠে নামে এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ([Awami League]) সরকারের পতনের পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ([Dr. Muhammad Yunus])-এর নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেনাবাহিনীকে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয় যা এবার পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হলো।
সেনাবাহিনী এই ক্ষমতা ব্যবহার করলেও তারা কখনোই বাড়তি বলপ্রয়োগ করছে না, যা তাদের পেশাদারিত্ব ও জনতার পালস বোঝার ক্ষমতার ইঙ্গিত। তারা নিজেরাই বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পারে, অপরাধীদের আটক করতে পারে, পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারে এবং স্থানীয় সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে।
উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় সেনাবাহিনী
২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০০টি ঘর নির্মাণে সেনাবাহিনীকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা তারা মাত্র ২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় শেষ করে। দুইটি ডিজাইনে ৪৯২ ও ৫০০ বর্গফুটের ঘর নির্মাণে তারা অদ্বিতীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, প্রচার না করেও।
পাহাড় ও আন্তর্জাতিক শান্তি কার্যক্রম
পার্বত্য চট্টগ্রাম-এ শান্তি ও শিক্ষা বিস্তারে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনন্য। পাহাড়ে নিরাপত্তার পাশাপাশি তারা সেবা, শিক্ষা ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাসদস্যরা কৃষিশিক্ষা ও মানবিক সহায়তার কাজ করে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে।
আইন-শৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ভূমিকা
র্যাব ([RAB]) ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলে জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস ও মাদক উদ্ধার করা হয়। আবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সময়োচিত ও যুক্তিযুক্ত বলেই বিবেকবানরা মনে করছেন।