আব্বুর সঙ্গে স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো: নকিবুর রহমানের আবেগময় স্মৃতিচারণ

আজ আমার আব্বুর শাহাদাতের ৯ম বার্ষিকী। ২০১৬ সালের এই দিনে, ১১ মে, খুনি শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)–র শাসনামলে বিচারিক প্রক্রিয়ার নামে আমার আব্বুকে হত্যা করা হয়—এমনটাই দাবি করেছেন শহীদ সন্তান মোহাম্মদ নকিবুর রহমান (Mohammad Nakibur Rahman)।

শৈশবের মধুর স্মৃতি

১৯৮৪ সালের আজিমপুর (Azimpur) এলাকায় এক ভাড়াবাড়িতে কাটানো দিনগুলোর কথা তুলে ধরেছেন নকিবুর। চার ভাইবোন মিলে একটি রুমে ঘুমানো, আব্বুর অফিস বা সফর শেষে বাড়ি ফিরে আসার মুহূর্তগুলো ছিল আনন্দে ভরা।
আব্বুর জুতো-মোজা খোলার দায়িত্ব ছিল নকিবুরের, যা সে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পালন করেছে। এ কাজ ছিল তাদের মধ্যে এক অন্তরঙ্গ সময়।

ফুটবল, আর্জেন্টিনা ও বিশ্বকাপ

আব্বু ফুটবলের দারুণ ভক্ত ছিলেন—বিশেষ করে আর্জেন্টিনা এবং ম্যারাডোনার। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ তিনি দেখেছিলেন মগবাজারের দৈনিক সংগ্রাম (Dainik Sangram) অফিসে বসে, যেখানে সম্পাদক আবুল আসাদ (Abul Asad) তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেদিনই নকিবুরের চোখে আব্বু নায়ক হয়ে ওঠেন।

বিনয়ের প্রতীক

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (North South University) শিক্ষকতা করার সময় এক ছাত্রীর মাধ্যমে যখন আব্বুর সঙ্গে পরিচয় হয়, তিনি বলেন, “ও কী কিছু পড়াতে পারে?” — এ মন্তব্যে তাঁর বিনয়ের প্রতিফলন ঘটে।

চিকিৎসা ও সিঙ্গাপুর সফর

২০০০ সালে আব্বুর চোখে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। ডা. হারুন (Dr. Harun) ও পরে ডা. নিয়াজ (Dr. Niaz) চোখের সংক্রমণ শনাক্ত করেন। জামায়াতের সিদ্ধান্তে তাঁকে সিঙ্গাপুর (Singapore) পাঠানো হয়, যেখানে ডা. আর্থার লিম (Dr. Arthur Lim) পরীক্ষা করে জানান, বাম চোখে আর দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব নয়।

আত্মোপলব্ধি ও উপদেশ

আব্বুর কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে গভীর উপদেশ ছিল: “অশ্রু অনেক দামী জিনিস। অপচয় করো না। শুধুই আল্লাহর সামনে অশ্রু ফেলো।”
এ কথাটি আজও নকিবুরকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্মরণ করিয়ে দেয়, সাহস ও ধৈর্য জোগায়।

কুরআনের গল্প ও সূরা ইয়াসিন

শৈশবে আব্বু দুপুরে বিশ্রামের সময় কুরআনের গল্প বলতেন—ইব্রাহিম (আ.), ইউসুফ (আ.), মূসা (আ.) ও সূরা ইয়াসিনে উল্লিখিত সেই মানুষটির, যিনি রাসূলের পক্ষ নিয়েছিলেন। সেই স্মৃতিগুলো এখনো নকিবুরের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেছে।

শেষ প্রার্থনা

নকিবুর রহমান শেষ প্রার্থনায় বলেন:
“হে আল্লাহ, আমার আব্বুকে জান্নাতে সেই সম্মানের আসনে স্থান দাও, যেমন তুমি দিয়েছিলে শহরের সেই মানুষটিকে, যার কেবল ঈমানের কারণে জাতি তাকে হত্যা করেছিল।”
সূরা ইয়াসিন, আয়াত ২৬-২৭:
**”তাকে বলা হলো: তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল, হায়, যদি আমার জাতি জানত—
আমার রব আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”