“রাতে দরজা বন্ধ করেও ঘুমাতে দিতেন না শাশুড়ি”—পলাশ সাহার স্ত্রীর হৃদয়বিদারক অভিযোগ

চট্টগ্রামে (Chattogram) র‍্যাব-৭ (RAB-7) এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে (Chandgaon Camp) নিজ অফিস কক্ষে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া র‍্যাব সদস্য পলাশ সাহা (Palash Saha)’র মৃত্যুকে ঘিরে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যদিও চিরকুটে নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি পলাশ, তবে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা (Sushmita Saha) প্রকাশ করেছেন এক হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা।

শাশুড়ির মানসিক নির্যাতন ছিল দাম্পত্য জীবনের প্রধান বাধা

সুস্মিতা জানান, পলাশ ছিলেন একজন দায়িত্বশীল ও ভালোবাসাপূর্ণ স্বামী। কিন্তু তাদের বৈবাহিক জীবনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার শাশুড়ি। “আমার স্বামী খুব চাইতেন আমার সঙ্গে সংসার করতে, কিন্তু তার মা সেটা করতে দেননি। আমি বহুবার অনুরোধ করেছি, এমনকি পায়ে পড়েছি, কিন্তু উনি আমাদের শান্তিতে থাকতে দেননি,” বলেন সুস্মিতা।

তিনি জানান, তারা একই ফ্ল্যাটে থাকলেও পলাশকে তার রুমে থাকতে দেওয়া হতো না। এমনকি রাতে দরজা বন্ধ করেও ঘুমাতে পারতেন না। “দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেন শাশুড়ি, ঘুমাতেও দিতেন না,” জানান তিনি।

‘তুমি সহ্য করো’—পলাশের অনুরোধ

পলাশ সাহা তার স্ত্রীকে বারবার বলতেন, “তোমার কোনো দোষ নেই। কিন্তু আমি মাকে কিছু বলতে পারবো না। তুমি একটু সহ্য করো।” এই মানসিক যন্ত্রণা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে তাদের জীবনে।

দাম্পত্য জীবনের আড়াই বছর পার হলেও, পরিবার পরিকল্পনা নিয়েও তারা আতঙ্কে ছিলেন। সুস্মিতা বলেন, তার শাশুড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন মানসিক চাপ তৈরি করতেন যাতে তিনি নিজেই ডিভোর্স দিতে বাধ্য হন। কারণ ছেলের পক্ষ থেকে ডিভোর্স দিলে সামাজিক ও পেশাগত জটিলতা তৈরি হতো।

আত্মহননের চিন্তা ও পলাশের মৃত্যু

এই মানসিক যন্ত্রণায় এক সময় সুস্মিতা নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তার ঠিক পরদিনই ঘটে পলাশ সাহার করুণ মৃত্যু।

চিরকুটে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বার্তা

মৃত্যুর আগে পলাশ তার চিরকুটে স্ত্রীর দেওয়া গয়নার কথা উল্লেখ করেন এবং অনুরোধ করেন যেন তা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় স্মৃতিস্বরূপ।

সুস্মিতা বলেন, “সে ছিল খুব সৎ, নিঃস্বার্থ আর মাতৃভক্ত। কিন্তু সেই মায়ের কাছ থেকেই সে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা পেয়েছে। প্রতিটি মেসেজে সে আমাকে আশ্বস্ত করেছে, আমার কোনো দোষ নেই। আর সহ্য করতে না পেরে সে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।”