রাতুল ইসলাম ফাহিম নামের ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোর মালোয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একটি জাহাজের কন্টেইনারে উঠে পড়লে তাতে আটকা পড়ে। এরপর জাহাজটি মালোয়েশিয়ায় পৌছালে তাকে উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। এই ঘটনার পর মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন ইসমাইল গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সফরে আসলে ঐ কিশোরকে দেশে ফেরত পাঠাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় যাওয়া বিদেশিদের ক্ষেত্রে মানবিক কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে এসে ফাহিমকে বিদায় জানান।
ফাহিম কুমিল্লার ঝলাম দক্ষিণ ইউনিয়নের মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাতপুকুরিয়া গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কিশোর ফাহিমের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পেছনে মানব পা”চারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় জাহাজের একটি কন্টেইনারে ঢুকে পড়ে সে। ওই কন্টেইনারে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়ে পৌছায়।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কিশোর ফাহিমকে বাঁচানোই তাদের লক্ষ্য ছিল। ফাহিমকে উদ্ধারের পরপরই মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সাইফুদ্দিন ইসমাইল বলেন, ফাহিম কিশোর। তাকে সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তাছাড়া দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর ফাহিমের বেঁচে থাকাটা ছিল বিস্ময়কর। উদারতার জন্য তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
ফাহিম তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরলো
ফাহিম তার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষে সে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তার সঙ্গে ছিলেন কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কল্যাণ সহকারী মোকছেদ আলী। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিমানবন্দরে ফাহিমকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। তিন মাসেরও বেশি সময় পর ফাহিমকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার বাবা-মাসহ স্বজনরা।
গতকাল সন্ধ্যায় ফাহিমকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরে তার পরিবার। রাত ৮টার দিকে ফাহিম কথা বলে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে। প্রায় ১০ মিনিট কথা বলার পর ফাহিম কীভাবে কন্টেইনারে উঠে পড়ে তা বলতে পারেনি। সে শুধু বলতে পেরেছে যে, সে তার বাবা-মা এবং ভাইদের খুঁজছিল।
ফাহিমের বাবা ফারুক মিয়া বলেন, “ফাহিম ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সে বেশিক্ষণ কিছু মনে রাখতে পারে না। ফাহিমকে বারবার জিজ্ঞেস করেও আমরা কিছুই জানতে পারিনি। আমার ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় আমি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
ফাহিমের পরিবার ফাহিমকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দিত। এদিকে ফাহিমের এলাকাবাসীরা ফামিমের এই ঘটনার বিষয়ে জানান, ছেলেটি মানসিকভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক। সে তার পরিবারের নিকট ফিরে আসায় তারাও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সরকারের পদক্ষেপে এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তারা।