পারিবারিক কলহ ও স্বামীর সঙ্গে ছোট বোনের অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে শেষমেষ বাবা-মা ও ছোট বোনকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন ইসলাম মুন এক নারী। আর এরই জের ধরেই পরিবারের তিনজনকেই একে একে ‘হ”ত্যা’ করেন তিনি। ইতিমধ্যেই এ ‘হ”ত্যা’কা’ণ্ডের’ কথা স্বীকার করেছেন মেহজাবিন।
২০২১ সালের ১৮ জুন রাতে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় চা-কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমী ইসলাম ও বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীকে ‘হ”ত্যা’ করে মেহজাবিন। এ ঘটনায় মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মেহজাবিন ও শফিকুলকে আসামি করে কদমাতলী থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে কদমাতলী থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ফেরদৌস আলম সরকার গত বছরের ২২ আগস্ট মুনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, মুন তার স্বামী পেতে তার বাবা-মা ও বোনকে ‘হ”ত্যা” করেছে।
অভিযোগপত্র দাখিলকারী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমাতলী থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ফেরদৌস আলম সরকার জানান, বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে মেহজাবিন ইসলাম মুনের ঝগড়া ছিল। এই কারণে, মুন তার স্বামীর জন্য সম্পদ এবং স্বামীকে একান্তভাবে পেতে তিনজনকে চা-কফির সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলে।
মামলার বাদী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক মেয়ের পক্ষে তিনজনকে ‘হ”ত্যা’ করা সম্ভব নয়। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি শফিকুল জড়িত। সম্প’ত্তি ভোগ করার মানসিকতা আগে থেকেই ছিল। সে মুনকে ‘হ’ত্যা” করতে প্ররোচিত করে। কারণ সে আগে থেকেই হিংস্র ছিল। একটি ‘হ”ত্যা’ মামলার এক নম্বর আসামি মো. ঘটনার সময় শফিকুল বাসায় ছিলেন। তার কিছুই হয়নি।
তিনি বলেন, পুলিশ যা বলছে তা আমরা মানি না। বিষয়টি অন্য খাতে মোড় নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা আমাদের সাহায্য করেনি। আমরা চাই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হোক।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শফিকুলের সঙ্গে মেহজাবিনের বিয়ে হয়। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। মাসুদ রানা ২৬ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী। তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহিনী কদমতলী থানার মুরাদপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাসুদ রানা ভাড়া বাসায় এসে থাকতেন। কদমতলীর পূর্ব জুরাইনে একটি ভাড়া বাসায় স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন মেহজাবীন। মাসুদ রানা সৌদি আরব থেকে স্ত্রী মৌসুমীর কাছে মূল্যবান সম্পদ পাঠাতেন। মোহিনীকে লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো মানুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য মৌসুমী ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতে থাকে। তার মা মেহজাবীনকে তার বাবার পাঠানো কিছুই দেয়নি। এতে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে শফিকুল তার স্ত্রীর ছোট বোন মোহনির সঙ্গে অ’নৈ’তি’ক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ বিষয়ে মেহজাবিন তার বোনকে বারবার সতর্ক করলেও সে কর্ণপাত করেনি। মেহজাবীন তার বাবা-মাকেও জানায়। কিন্তু তারা কোনো কথাই বলে না। এ কারণে ২০২১ সালে হত্যার ঘটনার তিন মাস আগে মেহজাবিন তার বাবা-মা ও বোনকে তরমুজসহ চে’তনা’না’শক ওষুধ খাইয়ে’ ‘হ”’ত্যা”র চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে স্বামীকে একা পাওয়ার জন্য সে তার বোন, মা ও বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যা বলেছেন মেহজাবীনও।
তিনি বলেন, মেহেজাবিন প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে পুনরায় তাদের হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১০ জুন রাত ৮টার সময় মুরাদপুরের একটি ফার্মেসি থেকে ৯টি, ১৫ জুন আরও দুইটি এবং ১৬ জুন ১০টি ঘুমের ওষুধ কেনে। ১৭ জুন, শনিরখড়া একটি ফুটপাতের দোকান থেকে একটি চাপাটি, কাচি কিনেছিলেন। ১৮ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘুমের ট্যাবলেট, চাপা’টি, কা’চি,, স্বামী ও সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে যায়। আগের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তারা তাকে ক্ষমা করে। মেহজাবিন বাসায় থাকতে চাইলে মাসুদ রানা তাদের থাকতে বলে এবং নাতনি অনেকদিন পর বাসায় আসে। খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ১১টায় মেহজাবিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চা-কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মি’শি’য়ে খান। তারা সবাই অজ্ঞান হয়ে গেলে ঘরের প্রধান দরজা বন্ধ করে, বারান্দায় কাপড় শুকানোর দড়ি কেটে মায়ের পিঠে জড়িয়ে হাত-পা বেঁধে রাখে। বাবা ও বোনকে ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে হাত-পা বাধে। ওড়না পেঁচিয়ে তিনজনকে ‘শ্বা”স’রো”ধ করে ”হ”ত্যা’ করা হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, এই মুহূর্তে কারাগারের চার দেয়ালের মাঝেই দিন কাটছে মেহজাবিনের। এবং অন্যদিকে তার স্বামীও ভিন্ন একটি মামলায় কারাগারে রয়েছন।