Thursday , March 30 2023
Breaking News
Home / opinion / টিমটিম করে জ্বলতে থাকা পত্রিকাটিও ক্ষমতাসীনদের সহ্য হোলো না,শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দিলো:মারুফ

টিমটিম করে জ্বলতে থাকা পত্রিকাটিও ক্ষমতাসীনদের সহ্য হোলো না,শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দিলো:মারুফ

সম্প্রতি বাংলাদেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আরেকটি পত্রিকা।দৈনিক দিনকাল নামের জনপ্রিয় পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া নিয়ে এখন তৈরী হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই অনেক কথা বলছেন এ নিয়ে। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষে ছিল বলে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। এ দিকে এ নিয়ে এবার একটি লেখনী লিখেছেন বেগম জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-

অভাব-অনটন ও নানান সমস্যা-সংকটের আবর্তে পড়ে দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি কোনোমতে খুঁড়িয়ে চলছিল। অনেকটাই যেন টিকে থাকতে ও অস্তিত্ব জানান দিতে এটি প্রকাশিত হচ্ছিল। হালে এ পত্রিকার এমন কোনো প্রচার সংখ্যাও ছিল না, যা সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। সরকার-বিরোধী অনুসন্ধানী রিপোর্ট বা খুব গ্রহনযোগ্য মতামত প্রকাশের মতন অবস্থাও ছিল না দিনকালের। দক্ষ ও উপযুক্ত পর্যাপ্ত স্টাফার নিয়োগের মতন সামর্থই ছিলনা তাদের।

এমন টিমটিম করে জ্বলতে থাকা পত্রিকাটিও ক্ষমতাসীনদের সহ্য হোলো না। কারণ, দৈনিক দিনকাল বিএনপির মুখপত্র বলে পরিচিত এবং এর মালিকানা দলটির বর্তমান শীর্ষনেতা তারেক রহমানের। তাই অনেক রকম কারসাজি করে, একেবারেই অগ্রহনযোগ্য পন্থায়, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দিনকালের প্রকাশনা স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

সামনে রোজা ও ঈদ। এ সময়ে এই ভয়াবহ দুর্মূল্যের বাজারে এ পত্রিকায় কর্মরত কয়েক শ’ সাংবাদিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজন এক অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়ে যাবে। মানবতাহীন এসব হীনতার নিন্দা ও প্রতিবাদ কোনো কাজেই আসবে না। কারণ ওদের কানে মানবতার কথা কখনো পৌঁছে না এবং তাদের এসব দুষ্কর্মের দোসরের অভাব নেই।

দিনকালের আগে আমার দেশ পত্রিকা, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি সহ বিরোধী দলের দিকে ঝুঁকে থাকা প্রায় সব গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক ও চিফ রিপোর্টারকে মিথ্যা মামলায় জেলে নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান সহ অনেক সাংবাদিক দেশছাড়া। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির পৈশাচিক হত্যার ঘটনার তদন্তের নামে তামাশা চলছে। বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে নিভৃতে। চলমান আওয়ামী শাসনে কত সাংবাদিক যে খুন, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

এই পটভূমিতে দিনকাল বন্ধের ঘটনা মিডিয়াবৈরী আওয়ামী সরকারের লেটেস্ট অ্যাকশন। এই কারসাজি দেখে মনে এলো পুরনো দিনের কথা। আজ যারা এমন আচরণ করছে অতীতে তারা কেমন ব্যবহার পেয়েছে তা’ ভাবনায় এলো। তারই একটা সামান্য উদাহরণ তুলে ধরছি।

পাকিস্তান আমলে ঢাকা থেকে ‘পাসবান’ নামে একটি উর্দু দৈনিক বেরুতো। আমাদের বগুড়ার জামিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মালিকানাধীন ছিল সেটি। বগুড়ার বাইরে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিহারী জামিলদের নানান রকম শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। পাসবান পত্রিকার অফিস ছিল মতিঝিলে। তেজগাঁওয়ে ছিল তাদের অত্যাধুনিক ছাপাখানা।

সাবেক ছাত্র ও শ্রমিক নেতা শেখ ফজলুল হক মণির স্বাধীনতার পর বাসনা জাগলো তিনি মিডিয়া টাইকুন হবেন। তৎকালীন সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন ব্যক্তির ভাগ্নে এই যুবনেতার দাপটে তখন বাঘে-মহিষে একঘাটে পানি পান করে। তিনি পাসবানের অফিস ও প্রেস দখল করে নিজে মালিক সম্পাদক হয়ে বের করলেন একখানা সংবাদপত্র। নাম দৈনিক বাংলারবাণী। এই হাউস থেকে অচিরেই তিনি বের করলেন সাপ্তাহিক সিনেমা এবং আরো পরে ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস। মণি সাহেব হলেন সব ক’টিরই মালিক-সম্পাদক। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। দৈনিক ইত্তেফাক তখন কিছুটা স্বতন্ত্র ভূমিকা গ্রহন করায় বাংলারবাণী হয়ে ওঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুখপত্র।

বাংলারবাণীতে নিয়মিত স্বনামে লিখতেন শেখ মণি। তার একটি বিখ্যাত নিবন্ধের শিরোনাম ছিল : ‘আইনের শাসন চাইনা, মুজিবের শাসন চাই’। যা-হোক, একদলীয় সিস্টেম বাকশাল প্রবর্তনের পর এ দলের সম্পাদক হিসেবে সার্বক্ষণিক বিরাট দায়িত্ব শেখ মণির ওপর অর্পিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, দেশে শুধুমাত্র চারটি দৈনিক থাকবে সরকার-নিয়ন্ত্রিত। এই পরিবর্তিত অবস্থায় বাংলারবাণী বন্ধ হয়। বাংলাদেশ টাইমস সরকারী মালিকানায় চলে যায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সরকার উৎখাতের ঘটনায় শেখ মণিও নিহত হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ব্যক্তিমালিকানায় সব পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন শেখ মনির ভাই শেখ সেলিম দেন-দরবার শুরু করেন সরকারের সঙ্গে। তারই আবেদন-নিবেদনে সরকারের মালিকানাধীন সম্পদ তাকে ফিরিয়ে দিয়ে দৈনিক বাংলারবাণী ও সাপ্তাহিক সিনেমা পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেন জিয়াউর রহমান। বাংলারবাণী আ.লীগের মুখপত্র হিসেবে পুনঃপ্রকাশিত হতে থাকে। দলীয় সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাংলারবাণী প্রচার সংখ্যা বাড়াতে রগরগে নানান কাহিনীকে প্রাধান্য দিত।

বাংলারবাণীতে সাংবাদিকতা করা ওবায়দুল কাদের এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সেখানে জেনারেল সেকশনে চাকরি করতেন নানক। তিনিও বড় নেতা, মন্ত্রীও হয়েছিলেন। বাংলারবাণী এখন নেই। তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ, এ পত্রিকার জন্য জিয়ার বদান্যতায় ফিরে পাওয়া ভবন ও অন্যান্য সম্পদের মালিকানা আজও ভোগ করছে মরহুম শেখ মণির উত্তরসূরীরা।

শুধু পত্রিকা ফেরত নয়, নবাবপুর রোডের একটি চিলতে অফিস থেকে আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু এভেন্যুতে সুপরিসর কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের জন্য অফিসও বরাদ্দ করেন জিয়াউর রহমান। এখন জিয়ার উত্তরসুরীরা আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে সে-সকল উদারতার প্রতিদান কড়ায় গণ্ডায় পাচ্ছে।

প্রসঙ্গত,এ দিকে দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া নিয়ে সবখানে চলছে আলোচনা। আর এ নিয়ে বাংলাদেশকে বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমও। তবে এ নিয়ে সরকার থেকে জানানো হয়নি কিছু। তবে পত্রিকাটি যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার সঠিক খবর পাওয়া গেছে ইতিমধ্যেই।

About Rasel Khalifa

Check Also

প্রথম আলোও হিরোর পক্ষে, মামুনুর রশিদকে এখন সবাই জিজ্ঞেস করছে আপনি কী ছিঁড়েছেন : সঞ্জু

হিরো আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসেন এবং সেই সাথে দেখা যায় তাকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *