পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিডিআর কর্মকর্তাকে নির্ম”/মভাবে হ”/ত্যা করা হয। কিন্তু এই ঘটনার পেছনে কারণ কি ছিল সেই বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে সাজা প্রদান করে আদালত। কিন্তু নেপথ্যের কারণ এখনো অনেকটাই অস্পষ্ট। তবে এবার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার নেপথ্যের বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে কারা রয়েছে সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে”সবুকে বিভিন্ন প্রমাণসহ একটি ভিডিও তুলে ধরেছেন জয়।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। এই দিনে বিডিআর বিদ্রোহের ১৪ বছর পূর্ণ হলো।
বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যে কারা? ‘সেনা কর্মকর্তাদের হ”/ত্যার মিশনে কার লাভ আর কার ক্ষতি?’ শিরোনামের ভিডিওতে বলা হয়েছে, ‘বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন থেকে পরের দুই দিন খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন? ঘটনার আগের দিন তারেক রহমান বেলা ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে ৪৫ বার ফোন করে সকাল ৬টার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে বলেন, কিন্তু কেন? বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ও কল রেকর্ডের সূত্র ধরে। এ ছাড়া সংসদে মিথ্যা বা অযাচিত তথ্য দিলে তার বিপরীতে প্রতিবাদের ভিত্তিতে বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়। তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বিএনপির আইনজীবী। তাদের সলিসিটর নোটিশ পাঠানোর আরও নজির রয়েছে। কিন্তু সংসদে উপস্থিত থেকেও প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) উত্থাপিত অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি বিএনপি।
ভিডিওতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিডিআর হ”/ত্যাকাণ্ডের আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দূত জিয়া ইস্পাহানি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার জন্য পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়। জিয়া ইস্পাহানি ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তকে ব্যঙ্গ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান থেকে আসা ব্যক্তির সঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? জিয়া ইস্পাহানি কার বা কার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন? আইএসআই ও বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ যে অভিন্ন এমন মনে না করার কোনো কারণ কি আছে? এছাড়া পাকিস্তানের আবেদন খারিজ হওয়ার পর এবং বিডিআর বিদ্রোহের চার দিন আগে জামায়াত নেতা মুজাহিদ দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেন তিনি দেশের বাইরে যেতে চাইলেন?’
এতে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচনে যে দল হেরে যায় তাদের সাধারণত শুরুতে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম থাকে না। তবে বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দেয় বিএনপি। পরাজয়ের গ্লানি ও হতাশা দূর করে মনোবল ফিরিয়ে আনা যদি উদ্দেশ্য হয়, সেক্ষেত্রে একমাত্র প্রভাবিত করতে পারেন দলের প্রধান তথা খালেদা জিয়া। তবে ওই বৈঠকে খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন না। বিকালে বিএনপির বৈঠক শেষ হলে রাত থেকেই শুরু হয় বিডিআর সদস্যদের ক্ষো”ভের নিষ্ক্রিয়তা।
সজিব ওয়াজেদ জয়ের শেয়ার করা ভিডিওতে বলা হয়, “খু”/নের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করা সদস্যদের মধ্যে সিপাহী মইন, সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকসহ অধিকাংশ আসামি বিএনপি আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। হ”/ত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া ২২ জনকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।এর মধ্যে ১৪ জনকে ২১ আগস্ট ডিও লেটার জারি করেন গ্রে”/নেড মামলার আসামি বিএনপির উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু।পাকিস্তানি জ”/ঙ্গি বা”হিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক, আইএসআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং অ”/স্ত্র চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে আবদুস সালাম পিন্টু বাংলাভাই এবং জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) উত্থানের সাথে সরাসরি জড়িত।তাহলে, জ”ঙ্গি গোষ্ঠী ও বিএনপি কি আগে থেকেই বিডিআরে একটি রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত করেছিল?
ভিডিওতে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাঁচ বছরের নৈরাজ্য, অরাজকতা, স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির পর ২০০৬ সালে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু সে”/নাবাহিনীর কারণে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মঈন উদ্দিন আহমেদসহ অনেক সে”না কর্মকর্তা তাদের অপকর্ম তুলে ধরেছিলেন। যা বিএনপির জন্য খুবই বিব্রতকর ছিল। পিলখানা হ”/ত্যাকাণ্ডে প্রয়াতদের অধিকাংশই ২০০৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। বিডিআর প্রধানসহ অনেককে নির্ম”/মভাবে হ”/ত্যা করা হয়। বিশেষ নির্দেশ ছাড়া এভাবে হ”/ত্যা করা মোটেও স্বাভাবিক নয়। তাহলে কি বিডিআর হ”/ত্যার সমীকরণে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষো”ভ, প্রতি”হিংসা ও স্বার্থ কি উপেক্ষা করার মতো?’
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রয়াত কর্মকর্তাদের পরিবার এখনো ভুলতে পারেনি দিনটির ভ”য়াবহ ঘটনার বিষয়টি। তাদের সামনেই অনেক অঘটন ঘটায় বিদ্রো’হীরা। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের কারো কারো শাস্তি হলেও নেপথ্যে অনেকে রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি না থাকার কারণে শা”স্তির আওতায় আনা যায়নি। বিডিআর কর্মকর্তাদের পরিবার আশা করে যে, এই ধরনের ঘটনা যাতে বাংলাদেশে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।