বাংলাদেশের সব থেকে বড় বিমান বন্দর হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন ওঠা নাম করে শত শত বিমান। তবে এই বিমান বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। সেই সব অভিযোগের মধ্যে এবার আসলো নতুন খবর। জানা গেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১২টি বিমান পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স এই বিমানগুলির মালিক, যেগুলি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। সব স্থাপনা এখন বন্ধ। তাদের কোনো অফিস নেই।
তবে এসব পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরাতে একাধিক চিঠি দিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (পিবিএ)। কোনো সাড়া না পেয়ে এক বছর আগে নিলাম শুরু হয়। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধের জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। ছয় মাস পরেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের কার্গো গ্রামের বিশাল এলাকায় বিমানগুলো পড়ে আছে। এ ছাড়া এসব বিমানের পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে যে ১২ টি পরিত্যক্ত বিমান অপসারণের ফলে যে স্থান খালি রাখা হয়েছে তাতে কমপক্ষে সাতটি বিমানের পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বিমানের মালিকরা সাড়া দিচ্ছেন না। বেবিচক ‘ঘাড়ের কাঁটা’ হয়ে ওঠা বিমান বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিলাম হলে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ আদায় করা হবে, কার্গো পল্লীতে জায়গাও খালি করা হবে। তবে নিলামে কাঙ্খিত দাম না পাওয়া গেলে প্রতি কেজি দরে বিমান বিক্রি করা হবে।
বেবিচাকের মতে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্লেন বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি এবং এভিয়ানা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান আটকা পড়েছে। এই বিমানগুলির পার্কিং চার্জ এবং সারচার্জ বাবদ প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে জিএমজি এয়ারলাইন্সের। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৬০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে, জিএমজি এয়ারলাইন্স তার আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে। এরপর আর কখনো উড়েনি এই কোম্পানির বিমান।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বকেয়া পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। রিজেন্ট ২০২০ সালের মার্চ মাসে বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। এছাড়া পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের কাছে ১৯০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বেবিচক এরই মধ্যে বিমানের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এরপর বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বছরখানেক আগে বকেয়া আদায়ে নিলামে উড়োজাহাজ বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধের জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। এতদিন পরেও তাদের দেখা হয়নি। এ কারণে আবারও নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই এই নিলামের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিমানটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বহুবার চিঠি দিয়েছি। তবে এয়ারলাইন্সগুলো কোনো সাড়া দেয়নি। এমনকি তাদের বকেয়া টাকাও পরিশোধ করেনি। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা তা দেয়নি। এখন বেসামরিক বিমান চলাচল আইন-অনুযায়ী পরিত্যক্ত বিমানগুলো বাজেয়াপ্ত করে দ্রুত নিলামের আয়োজন করা হবে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ নিলামে তোলা কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য নয়। নিলামের মূল কারণ বিমানবন্দরের নিজস্ব জায়গা বাড়ানো। এখন শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ জন্য কার্গো এলাকায় পার্ক করা বিমানগুলো সরাতে হবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রুত নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিলামে কাঙ্খিত দাম না পাওয়া গেলে প্রতি কেজি দরে বিমান বিক্রি করা হবে।
ইতিমধ্যে, এই বিলুপ্ত এয়ারলাইনগুলির কোনওটিরই এখন অফিস এবং ঠিকানা নেই। ফলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে বিমানবন্দরটি বিশাল ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। কার্গো-গ্রাম এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পরিত্যক্ত বিমান সরিয়ে নিলে অন্তত সাতটি বিমান সেখানে পার্ক করা যেত। একই সঙ্গে কার্গো প্লেনে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
প্রসঙ্গত, এ দিকে বিমান গুলো খুব দ্রুত অপসারণ করে ফেলা হবে বলে জানানো হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে। আর এই কারণেই মূলত নিলামের ব্যবস্থা করা হয়েছে অন্যথায় নেয়া হবে কেজি দরে বিক্রির ব্যবস্থা।বিশেষ করে নিলামের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, “নিলাম প্রক্রিয়া নির্ধারণের পদ্ধতি ও সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনি মতামত নিয়ে ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। আশা করছি, এর আগেই নিলাম সম্পন্ন করতে পারব। তৃতীয় টার্মিনাল খোলে।