গেলো বেশ কিছু দিন ধরে সাবেক এক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। শান্ত কুমার রায় নামের এই ছাত্রলীগের নেতা মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখন। আর এই আলোচনার শেষ হতে না হতেই নতুন সমালোচনার জন্ম দিলেন তিনি।
‘৫০ লাখ টাকা লইয়া এক সপ্তাহ ঘুরছি। চাইলে আরও দিমু। আমারে সভাপতি দেওন লাগব। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা মানা করছে। ওবায়দুল কাদের প্যাঁচটা লাগাইছে।’
এসব কথা বলেছেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক শান্ত কুমার রায়। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা চুরি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবীনগর থানায় ১২টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
১০০,০০০ টাকা দিলে এক সপ্তাহ পর সেই টাকা সহ ১০,০০০ টাকা লাভ হবে। ২ লাখের জন্য ২০ হাজার। তিনি যত বেশি অর্থ দিয়েছেন, তত বেশি পেয়েছেন। কাউকে বলা হয়েছে সোনা, কাউকে বলা হয়েছে জমির ব্যবসা, আবার কাউকে বলা হয়েছে এই টাকা সিগারেটের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে। নবীনগরের দুই গ্রামের অন্তত ১৫ জন এই ফাঁদে পড়েন।
নবী নগরের গ্রাম্য ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন শান্তার কাছ থেকে যারা টাকা পাবে তাদের উঠিয়ে দেন। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন। তিনি শান্তকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন বলে দাবি করেন। এর প্রমাণ হিসেবে তার কাছে ১০ লাখ টাকার লেনদেনের ভয়েস রেকর্ড রয়েছে।
আব্বাস উদ্দিনের হাতে থাকা ভয়েস রেকর্ডিংয়ে শান্তকে বলতে শোনা যায়, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য রাজধানীতে ছুটেছেন। তিনি হলেন ‘জয় ভাই (ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) গেলগা পঞ্চ। এ কারণে এখন কেন্দ্রীয়ভাবে পদ নেব। শেখ হাসিনা জেলা কমিটি করতে নিষেধ করছেন। আমি নীলা জেলা কমিটির সভাপতি হতাম, একটু লাইগা। ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় ঘুরছি। রুমে টাকা দিচ্ছি, বাইরে ঈসা পড়ছি। এটা দিতে হবে কিন্তু নেতার নির্দেশ, কমিটি না দিতে।
এরপর রেকর্ডিংয়ে আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে শান্তার অর্থ লেনদেনের কথা রয়েছে। শান্ত তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়। এরপর তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আব্বাস উদ্দিনকে লেনদেনের কাগজ দেবেন। তার সঙ্গে থাকা সুজন ও শ্যামলকে কাগজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে শান্ত কুমার বলেন, “কেরানীগঞ্জে কিছু লোক প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করছে। আস্তে আস্তে ব্যবসা না বাড়ালে আমরা যাব কী করে! টাকা না থাকলে রাজনীতি কিভাবে করবেন, একজন হোন। বড় মানুষ, তুমিও হতে পারবে না।’
তখন আব্বাস উদ্দিন বলেন, তুমি একবার ছাত্রলীগের সভাপতি হলে ধীরে ধীরে তোমার সব লাইন ভেঙে যেত।
উত্তরে শান্তো বলল, আরে ভাই, কয়েন নেই, দোয়া করবেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারলে ইতিমধ্যে মাসে ১ কোটি টাকা পেতেন। রোজগারের দরকার ছিল না। এই বিয়েতেও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে।
লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্বাস উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে তাকে টাকা দিয়েছি। এই রেকর্ড ছাড়া আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘কারও অপকর্মের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। শান্ত অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত,এ দিকে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে বলা তার এই কথার অডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সবখানে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। বিশেষ টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের পদ বাগানো নিয়ে এখন সবখানে শুরু হয়েছে নানা ধরনের কথা।এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, শান্তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১২ জন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকেও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।