কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাধীন একটি এলাকায় নিজের ঘরে সুমন মিয়া নামের ২১ বছর বয়সী অটোচালক যুবকের নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, ঘটনা ঘটার দিন রাতে বেশ কয়েকজন তরুণ সুমনের ঘরে প্রবেশ করে। এদিকে এ ঘটনার পর প্রয়াত সুমন মিয়ার স্ত্রী তার স্বামীকে খু”/নের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সুমনের প্রয়াণের পর সুমনে স্ত্রী সুমিকে শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে, তাকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়নি। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এটি পরিকল্পিত হ”/ত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছে সুমনের পরিবার ও পুলিশ।
রৌমারী থানার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত সুমি তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও স্বামীকে হ”/ত্যার কথা স্বীকার করেছে। একাধিক তরুণ সেদিন ঘরে প্রবেশ করার কথা জানালেও তাদের নাম জানাননি সুমি। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমা”ন্ডে নেওয়া হবে।
এদিকে সুমন হ”/ত্যায় জড়িত সন্দেহে আকরামুল হক সৌরভ (১৭) নামে এক স্কুলছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে যাদুরচর ইউনিয়নের বাইমমারী গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে। উপজেলার কোমরভাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর সৌরভের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা রয়েছে। পুলিশের দাবি, সুমনকে খু”/নের সঙ্গে এই কিশোর ‘গুরুতরভাবে জড়িত’।
এদিকে সুমন হ”/ত্যার ঘটনায় সুমনের বাবা মোতালেব বাদী হয়ে প্রয়াতের স্ত্রীসহ অজ্ঞাতনামাদের আসা”মি করে মামলা করেছেন। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুমনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ম”র্গে পাঠানো হয়েছে। ওই দিনই সুমিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সাত দিনের রিমা”ন্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, আদালত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামি সুমিকে কা”রাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি গ্রামে নিজ বাড়ির বিছানায় অটোচালক সুমনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তার পরিবার। রাত আড়াইটার দিকে সুমনের স্ত্রী সুমি নিজেই শ্বশুর-শাশুড়িকে ডেকে নিয়ে সুমনের নিথর দেহ দেখায়। সুমনের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
সুমনের ফুফু রোজিনা জানান, সুমনের প্রয়ানের পর সুমির চোখে পানি ছিল না। কেউ তাকে কাঁদতেও দেখেনি। সুমি বেশ স্বাভাবিক ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হ”/ত্যা করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সুমনের মা।
পুলিশের বরাত দিয়ে রোজিনা বলেন, ‘সুমি পুলিশকে জানায়, ‘পুলিশরে সুমি কইছে, ওই রাইতে নাকি তিন জন ছেলে সুমনের ঘরে ঢুকছিল। কে কে ঢুকছিল তা আমাদের কয় নাই।’
প্রতিবেশী ফারুক হোসেন বলেন, “সুমনের প্রয়ানের পর তার বাবা চিৎ”কার করলে আমরা দৌড়ে আসি। স্বামী মারা গেছে অথচ বউটার কোনও বিকার নাই। সে (সুমি) বলতেছিল, ছেলেটা নাকি গলায় কাপড় দিয়া আড়ের সাথে ঝুলছিল। সে নিজে নাকি নামাইছে। ঘরে স্বামীর লাশ। কিন্তু সুমির চোখে এক ফোঁটা পানিও নেই! পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সুমনের স্ত্রীকে কেউ কাঁদতে দেখেনি।
আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম যিনি পুলিশ সুপার হিসেবে রয়েছেন, তিনি ঘটনার বিষয়ে বলেন, সুমনের স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত, সেই সাথে তিনি হ”/ত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করার পর পাওয়া তথ্য অনুযায়ী একজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে সৌরভ নামের ওই কিশোরের গুরুতর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে সৌরভকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে অন্য কারা জড়িত রয়েছে সে বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ।