Thursday , March 30 2023
Breaking News
Home / Countrywide / আমি বুঝতেছি যে আমি শেষ হয়ে গেছি, লাইফ হেল হয়ে গেছে: ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার সহযোগী

আমি বুঝতেছি যে আমি শেষ হয়ে গেছি, লাইফ হেল হয়ে গেছে: ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার সহযোগী

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা আবাসিক হল বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার মতের সাথে যদি কারো মতের মিল না হতো, তাহলে তার উপর অমানুষিকভাবে নি”/র্যাতন করা হতো। সেইসাথে চলতো অকথ্য ভাষায় গা”লিগালাজ। পান থেকে চুন খসলেই তাকে নানাভাবে ভয়ভী”তি প্রদর্শনসহ বিভিন্নভাবে হুম”/কি -ধমকি দিতেন। তার নিজস্ব একটি ক্যাডার বাহিনী ছিল, যাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ভয়-ভী”তি প্রদর্শন করতেন। সেইসাথে তিনি তাদের দিয়ে হল শাসন করাতেন। .তার অপকর্মে ১৩-১৪ জন সহযোগী তাকে সহায়তা করতো। তিনি তার সহকর্মীদের বলতেন, যা ইচ্ছে তোরা কর, আমি সব দেখব। হলে তার কথাই শেষ কথা ছিল।

ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তরা এক আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছিলেন। হলে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। কারা হলের সিট পাবে, কে কোন ব্লকে থাকবে তা নির্ভর করতো অন্তরার ওপর। হল প্রভোস্টও তার কাছে অসহায় ছিলেন। হলে কোথায় কী হচ্ছে, কাকে শায়েস্তা করতে হবে– এই খবর ১৩-১৪ জন সহযোগী অন্তরাকে জানাতেন। তার নির্দেশে, সহযোগীরা মুহূর্তের মধ্যে যে কারও উপর হা”/মলা চালাতো। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অন্তরার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। সবাই তাকে ভ”য় পেত। হলের প্রভোস্টও ছিলেন অন্তরা বাহিনীর কাছে জিম্মি ও অসহায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নি”/র্যাতনের ঘটনায় অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম ইসলাম, ইশরাত জাহান মীম, হালিমা আক্তার উর্মি, মোয়াবিয়া ইসলামকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরীকে যে নি”/র্মম নি”র্যা/’তনের ঘটনা ঘটেছে তার সত্যতা বেরিয়ে এসেছে দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। অন্তরার সাথে যে তিনজন হল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল তারাই এখন তাকে দুষছেন।

সূত্রের খবর, আধিপত্য বজায় রাখতে হলের নতুন ও পুরনো ব্লকের প্রতিটি তলায় চারজন করে প্রতিনিধি রেখেছেন অন্তরা। এইভাবে দুটি ব্লকে ৪০ জন প্রতিনিধি ছিল, প্রতিটি ব্লকে ২০ জন। এছাড়াও, গণরুমের নিয়ন্ত্রণে ছয়টি গণকক্ষে তার ১২ জন প্রতিনিধি ছিলেন। তারা ১৩৪ জনকে নিয়ন্ত্রণ করতো। হল প্রভোস্টদের চূড়ান্ত রায় মানতে বাধ্য করা হয়েছিল। হলের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘আন্তরা আপু চোখ রাঙিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাকে তো আমরা সবাই ভয় পেতাম, হলে একচেটিয়া তার একটা প্রভাব ছিল।’

সূত্র জানায়, ফুলপরির অপরাধ ছিল অন্তরার সহযোগী ও প্রতিনিধি তাবাসসুমকে না জানিয়ে হলের কক্ষে ওঠে। অন্তরা এটা জেনে রেগে যায় এবং তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য তিনি প্রভোস্টকে চাপ দেন। কিন্তু প্রশাসন অসহায় ও দরিদ্রদের কথা বিবেচনা করে ফুলপরীকে হলে থাকতে দিলে তা মেনে নিতে পারেননি অন্তরা। ক্ষি”/প্ত হয়ে তিনি ফুলপরীকে নি”/র্যা’তনের নির্দেশ দেন।

বহিষ্কৃত একজন বলেন, অন্তরা আপু আমাদের ভয় দেখিয়ে এক ঘণ্টার জন্য ফুলপরীকে রুমে ডেকে র‍্যাগ দিতে বলে। তিনি বলেন, ‘যা ইচ্ছা তোরা তাই করবি। যত কিছু হবে সব আমি দেখব।’ এসব করা ঠিক না বললে চোখ রাঙিয়ে বলেন প্রয়োজনে শেষ করে দিবি। এটা বলে আমাদের ভয় দেখান। অন্তরা আরো বলেন, ‘যা বলি তাই কর। প্রয়োজনে ফুল পরীকে গুম করে দিব। এরপর যদি কিছু হয়, আমি একাই দেখব, তোদের কিছু ভাবতে হবে না।’ নি”/র্যাতনের পর অন্তরা আপু আমাদের বলেন- ‘বাইরের কাউকে কিছু জানাবি না।’ তারপর সে জোর করে আমাদের মোবাইল ফোন থেকে সব কল লিস্ট এবং মেসেজ মুছে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে অন্তরা একজন সহযোগীকে বলেন, ‘আগে আমি বাঁচি, পরে তোদের বাঁচাব। চিন্তা করিস না।’

অপর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা যা করেছি তা বাধ্য হয়ে করেছি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কথা না শুনলে সমস্যা হতো। তাদের কথা শুনে এখন তো আরও বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছি। আমি বুঝতেছি যে আমি শেষ হয়ে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা বলেছিল আমাদের বাঁচাবে। এখন আমাদের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে। আমার বাবা সাত দিন ধরে আমার সঙ্গে কথা বলেনি। সামনে পরীক্ষা। তবে পরীক্ষা দিতে পারব কিনা জানি না। এমনকি ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর আমাকে বাড়িতে উঠতে দেবে কিনা তাও জানি না।

অভিযোগ অস্বীকার করে অন্তরা বলেন, আমি কাউকে হুম”/কি দেইনি। আমি হ”/ত্যা বা গু”/ম করার কথা বলিনি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ জুনিয়রদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় কর্মসূচিতে র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার জন্য বলতাম। এ ছাড়া কিছুই নয়।’

ছাত্রলীগের ইবি শাখার সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনার দিন আমি বাইরে ছিলাম। ওই রাতেই সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় অন্তরার। অন্তরা নিজেকে রক্ষা করতে আমার নাম ব্যবহার করতে পারে।

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ঘটনার দিন থেকে আমি অন্তরার সঙ্গে এক মিনিটও কথা বলিনি। এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তরার পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো রেফারেন্স ছিল না। আমি জানি না তিনি কীভাবে পদটি পেলেন। আমার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।

মুখ ঢেকে হল ছেড়েছেন অভিযুক্তরা : হাইকোর্টের নির্দেশে আগে থেকেই হলের বাইরে ছিলেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম ইসলাম। একইসঙ্গে চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি আগে থেকেই হলের বাইরে অবস্থান করছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ইসরাত জাহান মিম ও মোয়াবিয়া জাহান নামের দুইজন অভিযুক্ত অনেকটা নিজেদের আড়াল করে মুখ ঢেকে হল ত্যাগ করেছেন। তাবাসসুম নামের অন্য একজন অভিযুক্ত দুপুরের দিকে তার হলে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। মিম ও উর্মি নামের অপর দুজন হল ছেড়েছেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রভোস্ট নিজেই। এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা জানিয়েছেন , হল আমি আগেই ছেড়ে দিয়েছি। জিনিসপত্র আনতে হলে আমি যাইনি। হল থেকে আমার জিনিসপত্র এক বান্ধবীকে বললে, সে দিয়ে গেছে।

 

About bisso Jit

Check Also

গোপনে মোবাইল ফোন দেখে তারাবি নামাজ পড়ান ইমাম, মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ

শুরু হয়েছে রমজান মাস। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও মানুষ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *