এ বছর যেসব বাংলাদেশি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন তাদের নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বাড়তি এক সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন। যার কারনে হজ পালনেচ্ছুকদের রেজিস্ট্রেশন করার মেয়াদ আগামি ৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের যে খরচ সেটা অনেক বেশি বলে মনে করছেন হজ পালনেচ্ছুকরা।
এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার উভয় প্যাকেজই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
এবার রেকর্ড খরচে হজ করতে হচ্ছে। বিমান ভাড়াও গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা বেশি।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী (১ মার্চ পর্যন্ত) মাত্র ৩৫ হাজার ৫৩৫ জন (সরকারিভাবে ৭ হাজার ৫৫৫ এবং বেসরকারিভাবে ২৭ হাজার ৯৮০ জন) চূড়ান্তভাবে হজ নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ ১ লাখ ২৭ হাজারের কোটা পূরণ করতে প্রয়োজন আরও ৯১ হাজার হজযাত্রী।
ডয়চে ভেলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের হজ খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে৷ দেখা গেছে, এসব দেশের চেয়ে বাংলাদেশিদের হজে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
ভারত
২০২০ সালের নভেম্বরে, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে যে ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে হজের খরচ জনপ্রতি ছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু পরের বছর রাজ্যের হজ কমিটি এই খরচ বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ বছর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত খরচের তথ্য প্রকাশ করেনি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভারতে হজ ভর্তুকি বন্ধ করা হয়েছিল।
পাকিস্তান
চলতি বছরের হজের খরচ এখনো চূড়ান্ত করেনি দেশটির সরকার। তবে পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ উমর বাট গত শনিবার বলেছেন, হজ করতে জনপ্রতি খরচ হতে পারে ৩,১১,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ টাকা।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া থেকে হজে যেতে সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা ব্যায় করতে হবে। গত বছরের ২২ এপ্রিল হজের খরচ ঘোষণা করে দেশটির সরকার।
বলা হয়েছে, বি-৪০ গ্রুপের (যে পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম) তাদের জন্য ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। আর যেসব পরিবারের মাসিক আয় এর বেশি তাদের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিভাগের মন্ত্রী ইদ্রিস আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, সরকার প্রতি বছর হজে ভর্তুকি হিসেবে ৬০০ থেকে ৮০ কোটি টাকা দেয়।
ইন্দোনেশিয়া
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশের মুসলমানদের হজে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেখানে হজে যেতে জনপ্রতি খরচ হয় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ টাকা। হজের জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন হলে সরকারের হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
২০১৯ সালে, ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী লুকমান হাকিম দাবি করেছিলেন যে, আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে একজন মুসল্লিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে হজ করতে সর্বনিম্ন অর্থ ব্যয় করতে হয়।
তবে এই দেশগুলোর খরচের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কেন এ্ত বেশি খরচ ধার্য করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি ধর্ম মন্ত্রনালয়। তবে এর আগে জানাননো হয়েছিল, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া সহ বিমান পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে জনপ্রতি হজের খরচও বেড়েছে। তবে সেটা অনেক বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।