বর্তমান সময়ে সন্তানকে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনা প্রায় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উঠে আসতে দেখা যায়। এবার তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি এলাকায়। এক মা তার ৩ মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে এক ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ ভিক্ষুক সালমা বেগমের নিকট রেখে অন্যত্র চলে যান। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর পুলিশ ঐ শিশুকে উদ্ধার করে। তবে এই শিশুকে কেন ফেলে রেখে গিয়েছিলেন সে বিষয়ে জানালেন ঐ শিশুর মা।
লক্ষ্মীপুরে মানসিক কষ্টের কারণে শিশু মাহিন হোসেনকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে যান ঐ শিশুর মা এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সদর মডেল থানায় শি”শুটির মা সুরমা বেগম (৩২) এ কথা বলেন।
এ সময় জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ, পুলিশ মহিলা কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি সেলিনা মাহফুজ, সদর মডেল থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন ও জেলা যোগাযোগ পুলিশের সদস্য সচিব জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ উপস্থিত ছিলেন। শি”শুটির মা ও দাদা হাফিজ উল্যার সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা পুলিশ সুপার।
এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আমরা এখনই শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করছি না। আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে। শিশুটিকে বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার দম্পতির হেফাজতে রয়েছে।
শিশু মাহিন রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিরন হোসেনের ছেলে। মিরন-সুরমা দম্পতির সংসারে আরও ৩ মেয়ে রয়েছে। তারা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাঞ্চানগর এলাকায় ভাড়ায় থাকেন।
স্বজনরা জানান, শিশুটির বাবা মিরন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে কর্মরত। চার বছর আগে তিনি এসে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন। প্রায় ৭-৮ মাস আগে তিনি সৌদি চলে যান। কিন্তু তিনি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ করেননি। ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন স্ত্রী সুরমা। স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে এই বিষয় নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
সুরমা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ চরমনসা গ্রামের মীরবেড়ি এলাকায়। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বাবার বাড়ি থেকে বাসে করে লক্ষ্মীপুর শহরের বাঞ্চানগর এলাকায় ভাড়া বাসায় আসছিলেন তিনি। তিনি বাস থেকে শিশুটিকে নিয়ে লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পৌরসভার মজুপুর এলাকায় আধুনিক হাসপাতালের সামনে নামেন।
এর আগে ধারের টাকা পরিশোধ নিয়ে বাসে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এতে দুশ্চিন্তা সৃষ্টির পর তিনি শিশুটিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে যান। ভুলে শিশুটিকে নেননি তিনি।
পরে জেলা পুলিশ ভিক্ষুক সালমার হাত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের ভাই বেলালের পরিবারের হেফাজতে রাখে। সন্ধ্যায় বাড়ি যাওয়ার পর শিশুটির কথা মনে পড়ে তার মায়ের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তার পরিবার জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তবে অনেকে ধারনা করছেন মা রাগ করেই এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন, কেননা একজন মা কীভাবে সন্তানকে এত সময়ের জন্য ভুলে থাকতে পারেন। বিষয়টি যাতে সমাধান হয় এবং তার মা আর যাতে এমনটি না ঘটান সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে আশা তাদের।