বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। আর এই কারণে চিকিৎসা খাতে দেখা দেয় অনেক ঝামেলাও। তবে বাংলাদেশে প্রতিবছরই পাস করে বের হয় অনেক নতুন নতুন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে আবার অনেকেই এই পেশা পরিবর্তন করে চলে যায় অন্য পেশায়। আর এই কারণে এবার চিকিৎসকদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বারবার বলায়’ কিছু পরিবর্তন হলেও তা যথেষ্ট নয়।
সরকার প্রধান ডাক্তারি পড়া এবং অন্য সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পছন্দ করেন না। তিনি চান না চিকিৎসকরা তাদের পেশা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিন। শেখ হাসিনাও মনে করেন, টাকা রোজগার করা চিকিৎসকদের মূল লক্ষ্য হতে পারে না।
চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্য গবেষণার একান্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই সীমিত সংখ্যক লোকের দ্বারা করা হয়। কিন্তু কিছু অগ্রগতি বারবার করা হলেও, আরও প্রয়োজন।
“আমরা আমাদের গবেষণা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু দুঃখের কথা বলতে পারি না। অর্থাৎ আমাদের কৃষি গবেষণা চলছে, বিজ্ঞান চলছে, কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে আমাদের গবেষণা খুবই সীমিত। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিন।”
শেখ হাসিনার বক্তৃতায় এমবিসিএস পাস করা এবং বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন বা পুলিশে যোগদান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যে আলোচনা চলছে তাও উঠে আসে।
তিনি বলেন, “একদল চিকিৎসক এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা ও গবেষণা ছেড়ে সরকারি চাকরি বা রাজনীতিতে চলে যান। আরেক শ্রেণী আছে, তারা শুধু টাকা কামাইতে ব্যস্ত। একই সঙ্গে তিনি সরকারি চাকরি ও প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেছেন। সরকারি চাকরি ও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার পর আর কোনো গবেষণা নেই।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১০ জনের হাতে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ২১ জনের হাতে ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬ জনের হাতে ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’-এর চেক হস্তান্তর করেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গবেষণা যে সাফল্য আনতে পারে তা এখন প্রমাণিত। গবেষণার কারণে আমরা আমিষ ও খাদ্য উৎপাদনে সফল হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন এবং পরবর্তী বাজেটে তা বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করেন।
সরকারের দক্ষ বিজ্ঞানীর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা এবং এমএস, এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামে দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৮২ জনকে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি পর্যায়ে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’-এর আওতায় ২০০৯-১০ সাল থেকে ২৫ হাজার ৭০১ জন গবেষককে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও ফেলোশিপ-বৃত্তি-বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে চিকিৎসা খাতের অস্থিরতা। আর এই কারণে প্রায়শই দেখা দেয় দেশের চিকিৎসক সংকট। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন যারা চিকিৎসা খাতে রয়েছেন তারা যেন পেশা পরিবর্তন না করে।