Thursday , March 30 2023
Breaking News
Home / Countrywide / এবার দেশে হজ কোটার অর্ধেকই রেজিস্ট্রেশন হয়নি, নেপথ্যে দুই কারণ

এবার দেশে হজ কোটার অর্ধেকই রেজিস্ট্রেশন হয়নি, নেপথ্যে দুই কারণ

হজ নিয়ে বাংলাদেশে এ বছর দেখা দিয়েছে নানা ধরনের জটিলতা। আর এ সব কারণে এবার হজের রেজিস্ট্রেশন হয়নি অর্ধেক। এর মধ্যে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌদি সরকারের বিমান ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি। যার ফলে অনেকেই এবার যেতে পারছেন না হজে।

তিনবার সময় বাড়ানো হলেও এবারের হজযাত্রা আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না। আজ নিবন্ধনের শেষ দিনে অর্ধেক কোটারও নিবন্ধন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী- ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৪৬ হাজার ৫৫৭ জন। গতকাল নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। আর সরকারি প্রাক-নিবন্ধন মোট ৮ হাজার ৮৭৩ জন। গতকাল ৫১০ জন নিবন্ধিত হয়েছেন।

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্বপ্রথম শর্তই হলো- আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকতে হবে।

তাহলে শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন হবে। আর হজের জন্য মানসিক প্রস্তুতিও অপরিহার্য। আর্থিক সক্ষমতা মানে হজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা নিজেকেই পরিশোধ করতে হবে। কোনো প্রকার ঋণ বা ঋণ নিয়ে হজ করা যাবে না। এক কথায়, ঋণমুক্ত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর হজ ফরজ। বাংলাদেশ থেকে আসা হজযাত্রীদের একটি বড় অংশই বয়স্ক। যারা বছরের পর বছর নিজের উপার্জন থেকে টাকা সঞ্চয় করে হজের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে হজের খরচ দেড় লাখ টাকা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ মেটাতে পারছেন না তারা। তার উপরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় অনেকেই হজে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। হজ এজেন্সিগুলোর মালিকরা বলছেন, এ বছর হঠাৎ করে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। এর আগে হজযাত্রীরা টাকা নিয়ে ফেরত গেলেও কোটার অভাবে পাঠাতে পারেননি।

কিন্তু এবারও অর্ধেক যাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ৩০,০০০ টাকা জমা দিতে হবে যা পরে ফেরতযোগ্য। আর অবশিষ্ট টাকা রেজিস্ট্রেশনের চূড়ান্ত সময়ে জমা দিতে হবে। তবে এই খরচ বহন করতে না পারায় অনেকেই চূড়ান্ত নিবন্ধন করছেন না। এর পরিবর্তে অনেকে প্রাক-নিবন্ধনের টাকা ফেরত নিতে আবেদন করছেন। সিলেটের আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, গত বছর কোটা কম ছিল। তবে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ জনকে হজে পাঠিয়েছি। এ বছর কোটা বেশি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সাড়া পাচ্ছি না। সময় বাড়ানোর কারণে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। সময় আরও বাড়ানো হলে আরও যোগ করা হতে পারে। ঢাকার আল নূর ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্টের মালিক শরীয়তুল্লাহ শহীদ বলেন, এ বছর আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫০ জন হজে যাবেন।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজযাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, খরচ বেশি। সৌদি আরবে আগে সব খাতে খরচ কম ছিল, এখন খরচ বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়াও অনেক বেড়েছে। শুধু এ বছরেই বর্ধিত বিমান ভাড়া থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা কমানো সম্ভব। এতে করে হজযাত্রীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। আল-নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক। আবদুল্লাহ আল-নাসের বলেন, গত বছর হজে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এ বছর খরচ বেড়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি। তীর্থযাত্রী বা এজেন্সি মালিকরা ভাবতেও পারেননি খরচ এত বাড়বে। যারা হজে যেতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও খরচ বেড়ে যাওয়ায় কাজ হচ্ছে না। কারণ তীর্থযাত্রীদের অধিকাংশই গ্রামীণ মানুষ। যারা যায়, তারা অনেক কষ্টে টাকার ব্যবস্থা করে। অনেকেই ভেবেছিলেন এ বছর খরচ বাড়বে না। তাই আগের বছরের মতোই টাকার ব্যবস্থা করেন তিনি। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা তাদের মত পরিবর্তন করেছে। তিনি বলেন, গত বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ১০৪ জনকে পাঠিয়েছিলাম। আর এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন যোগাযোগ করেছেন।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (এটাবি) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, প্যাকেজের দাম বেশি হওয়ায় সাড়া কম। খরচ কম হওয়া উচিত ছিল। কারণ এখন প্যাকেজের দাম অনেকের নাগালের বাইরে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের লোকসানের বোঝা হজযাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা বারবার খরচ কমানোর দাবি জানিয়েছি। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ সরদার বলেন, কম নিবন্ধন মানেই কম মানুষ হজে যাবে। এতে এজেন্সিগুলোর ক্ষতি হবে। রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানুষের প্রবণতা শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তিনি আশা করছেন, শেষ দিনে রেকর্ড সংখ্যক লোক নিবন্ধন করবে। নিবন্ধন আশানুরূপ না হলে, আমরা সময় বাড়ানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ করব। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আশা করছি শেষ পর্যন্ত কোটা পূরণ হবে। কারণ এ বছর আমরা অনেক আগেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। রেজিস্ট্রেশনের সময় আবার বাড়ানো হবে। খরচ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, খরচ কমানোর সুযোগ নেই। এই আলোচনা আগেও হয়েছে। আর বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমান ভাড়ার বিষয়টি দেখছে।

উল্লেখ্য, এ দিকে হজ নিয়ে এমন বিড়ম্বনায় মানুষ পড়েছে এবারই প্রথম। আর এই সব বিড়ম্বনায় এবার অনেকেরই হজে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে যাচ্ছে স্বপ্নই। অনেক হজ যাত্রী এ নিয়ে ঝেড়েছেন ক্ষোভ।অনেকেই আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

About Rasel Khalifa

Check Also

গোপনে মোবাইল ফোন দেখে তারাবি নামাজ পড়ান ইমাম, মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ

শুরু হয়েছে রমজান মাস। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও মানুষ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *