নতুন বিয়ে করে মাত্র কয়েক ঘন্টা না যেতেই হাতের দেয়া মেহেদির রং না শুখাতেই বিধবা হতে হলো ফাতেমা খাতুনকে। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরে বাসর ঘরে স্বামীর কাছে যায় ফাতেমা। এ সময়ে স্বামী তার হাতে সোনার বলা পরিয়ে দিচ্ছিলেন। আর সেই সোনার বলা পরাতে পরাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তার স্বামী।পরে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটন আলীর মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) মাগরিবের নামাজে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম লিটন আলী (৪৩)। সে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়ইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মৃত শুকুর আলীর ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। শুক্রবার (১০ মার্চ) ঝিনাইদহ জেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি ঘোপপাড়া গ্রামের সোলায়মান হকের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। এরপর বাসর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, লিটন আলীর প্রথম স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার প্রথম বিয়ে থেকে লামিয়া খাতুন নামে ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত শুক্রবার ফাতেমা খাতুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন লিটন আলী। বাসর রাতে প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া সোনার চুড়ি দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতে দেওয়ার সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করার পরপরই লিটন আলী মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ হাসানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৯টার পর পরিবারের সদস্যরা লিটন আলীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রথমে ব্রেন স্টোকের মতো মনে হয়েছিল। ইসিজি রিপোর্টের পর জানা যায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে ঢাকা বা রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এক ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ দিকে এই ঘটনায় এখন সারা এলাকায় বিরাজ করছে শোকের ছায়া। সকলেই এমন একটি ঘটনায় একেবারেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন চান বলেন, লিটন আমার ভাগ্নে। একের পর এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে পরিবারের উপর। মাতৃহীন মেয়েটি বাবাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আবার রাতে স্ত্রী বিধবা। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ভাগ্যের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়।