নগদের ২৩০০ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না: শীর্ষ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ

জনপ্রিয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নগদ (Nagad)-এর পরিচালনায় বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ২,৩৫৬ কোটি টাকার কোনো হিসাব মিলছে না। টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে অস্তিত্বহীন ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানে, যা পরবর্তীতে পাচার হয়ে গেছে তৃতীয় দেশে।

এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের শীর্ষ নেতারা, কর্মকর্তারা এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিবও।

মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি ও ‘নগদ সিন্ডিকেট’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বনাম থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড — এই মালিকানা দ্বন্দ্বে নগদের আসল নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট ছিল না। ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট আন্তঃসংস্থার বৈঠকে মালিকানা নির্ধারণ হলেও তা থেকেও পুরো স্বচ্ছতা মেলেনি।

ভুয়া কোম্পানি ফিনটেকের জালিয়াতি

একটি মূল অনিয়মের সূচনা হয় ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে। এই কোম্পানির অফিস, কর্মকর্তা—কোনো কিছুর অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। অফিসের ঠিকানা হিসেবে দেওয়া বনানীর ডেলটা ডালিয়া টাওয়ার-এ গিয়ে তাদের কোনো উপস্থিতি মেলেনি, যদিও এই ভবনেই রয়েছে নগদের প্রধান কার্যালয়।

রহস্যময় শেয়ার মালিকানা ও লেনদেন

নগদের শেয়ারে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিটেড (২.৪%) – যার চেয়ারম্যান তানভির আহমেদ মিশুক, সাবেক পুলিশ কমিশনারের বন্ধু।
ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেড (৬%) – চেয়ারম্যান নাহিম রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র।
সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (১৫.৩%)

বিদেশি বিনিয়োগকারীর মধ্যে মিয়েরেশ হোল্ডিংস লিমিটেড (British Virgin Islands)-এর এককভাবে রয়েছে ৭০.৫ শতাংশ শেয়ার।

সন্দেহজনক ট্রান্সফার ও বিনিয়োগ

ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার লিমিটেড মাত্র এক বছরে ৫০০ কোটি টাকা নগদে বিনিয়োগ করে, যার বড় অংশ পরে সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অনুকূলে চলে যায়। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ট্রান্সফার ও ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি তৈরি হয়—যা তদন্তকারী প্রশাসকের কাছে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ করে। নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসাইন খান জানান, ৫ আগস্টের পরে নগদের শীর্ষকর্তারা পালিয়ে যান। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণ আমানত রক্ষায় হস্তক্ষেপ করে।

ভুয়া ঠিকানা, অচল অফিস

তাসিয়া হোল্ডিংসের অফিস নামমাত্র চালু আছে। ভবনের দারোয়ান জানান, আগে সেখানে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা আসতেন। এখন কিছুদিন পরপর দু’একজন এসে বসেন মাত্র।

নগদে শেয়ার লেনদেনে একাধিক সন্দেহজনক কার্যক্রম চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অডিট রিপোর্ট হাতে আসলেই বলা যাবে কত বড় পরিসরে দুর্নীতি হয়েছে।