পরকীয়ার জের ধরে নিজ স্ত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যার অভিযোগে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখা হয়েছে। তবে সেখানে থাকতে না চেয়ে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিলেন, তিনি সেখানে নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না।
সোমবার (১৩ মার্চ) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে মিতু হত্যা মামলার শুনানি করেন মো. বিচারক বাবুলসহ সাত আসামির বিচারের জন্য ৯ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেন।
বেলা ১২টার দিকে বাবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের মামলায় আদালত প্রাথমিকভাবে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মিতু হত্যা মামলা শুরু হয় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে পিপি মো. আবদুর রশিদ বলেন, “আজই অভিযোগ দায়ের হতে পারে। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে থাকায় মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকতে হবে। অন্য ক্ষেত্রে অন্য কোথাও নিতে হলে এখান থেকে নিয়ে আবার আনতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি করেন। তিনি বলেন, তিনি (বাবুল) কারাগারে থাকা অবস্থায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি মামলা করে পিবিআই। এ ঘটনায় মামলা করেছেন চট্টগ্রাম পিবিআই প্রধান মো. আরেকটি কাজ করেছেন সারাদেশে পিবিআই প্রধান। বাবুল কফিল উদ্দিনের আরেক আইনজীবী শুনানিতে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম সব জায়গায় পিবিআই তার বিরুদ্ধে মামলা করছে। এখানে (চট্টগ্রাম কারাগার) কেন? তাহলে কি কোন উদ্দেশ্য আছে?
এরপর আসামিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান মিয়া ও কামরুল ইসলাম শিকদার মোছার আইনজীবীরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। দুপুর ২টার দিকে আদালত শুনানি মুলতবি করে বিকাল ৪টায় আদেশের সময় ধার্য করেন। আসামিদের আইনজীবীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে আদালতের কার্যক্রম শুরুর দিকে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিন সোমবার বিকেলে এডিসি প্রসিকিউশন কক্ষে বাবুল আক্তারের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলার অনুমতি দেন।
এরপর বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে আদালত বলেন, ‘মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আমি রাষ্ট্রের আবেদন মঞ্জুর করছি।
কাঠগড়ায় থাকা বাবুল আক্তার বলেন, আমার বক্তব্য আছে। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে কাজ করেছি। সে সময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অনেক আসামি সাজা পেয়ে এখন চট্টগ্রাম কারাগারে। আর আমাকে যেখানে রাখা হয় (চট্টগ্রাম কারাগার) সেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।
বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, তাকে বর্তমানে কনডম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি ডিভিশনও পাননি। তাঁর আমলে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামিও এই কারাগারে রয়েছেন। বাবুল এক সময় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ছিলেন। বদলিতে যোগ দিতে ঢাকায় যাওয়ার পরই ২০১৬ সালের ৫ মে চট্টগ্রামে খুন হন তার স্ত্রী মিতু।
এরপর বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে হত্যা মামলা করেন। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে জানা যায়, বাবুলের পরিকল্পনায় মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাবুল প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। একই মাসের ২৯ তারিখ তাকে ফেনী কারাগারে নেওয়া হয়।
এ মামলায় হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহের জন্য গত বছরের ২২ মার্চ বাবুলকে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়। ওই দিন বাবুলের ‘শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা’র জন্য তাকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করলে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ২৪ মার্চ তাকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর থেকে বাবুলকে মামলার নির্ধারিত তারিখের আগেই ফেনী কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হচ্ছিল এবং মামলার কার্যক্রম শেষে ফের ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
সোমবার তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আদেশ দেওয়ার সময় বিচারক বলেন, “কোন অসুবিধা হলে, অসুস্থ হলে বা নিরাপত্তা চাওয়ার সুযোগ থাকলে। তখন বাবুল বলেন, আমি এ পর্যন্ত বহুবার অসুস্থ হয়েছি… (পরে কান্নাকাটি শুরু করে) কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পাইনি…। জেল কর্তৃপক্ষ। তারা ব্যবস্থা নেবে। আদালতও দেখবে। তখন বাবুলের আইনজীবী বলেন, ঢাকায়ও তার মামলা আছে, নিরাপত্তার জন্য ফেনীতে রাখুন।
শেষে বিচারক বলেন, ‘মামলার বিচারের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। আপনি পরে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা বা অন্যান্য বিষয়ে আদালতে আবেদন করতে পারেন। অসুবিধা হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে স্থানান্তর করা যাবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি তখন বিবেচনা করা হবে।’
এরপর আদালত বাবুল আক্তারের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন।
তবে নিজের বিরুদ্ধে উঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।