সাধারণ মানুষকে বিপুল পরিমাণে সুধ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এক এজেন্ট। টাকা সংগ্রহের পর হাটাৎ করে এলাকা থেকে সটকে পড়েন তিনি। এই ঘটনা অর্থ হারিয়েছে এলাকার অনেক মানুষ।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা মো: আলমগীর নিখোঁজ হয়েছেন। উপজেলার বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা গত ১২ মার্চ থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। পার্টনার ও এজেন্ট ব্যাংকিং ম্যানেজার নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক যুগ ধরে হুগলকান্দি গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে আলমগীর তার পার্টনার মানিক মিয়ার সাথে বীর কাটিহারী গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে বোর্ড বাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং করে আসছে। ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান হুগলকান্দি গ্রামের রিটন মিয়া।
আলমগীর ভালো আচরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন। একপর্যায়ে তিনি ফিক্সড ডিপোজিট বা ডিপিএস প্রতি ১ লাখ টাকা জমার বিপরীতে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা সুদ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এটি গ্রামবাসীদের ডিপিএসের প্রতি আগ্রহী করে তুলে। আলমগীর এসব ডিপিএসকে রেখে চেক দেন।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এই এজেন্ট শাখায় চর হাজীপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী রতন মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার স্বামীর পাঠানো ২৭ লাখ টাকা রাখেন। হুগলকান্দি গ্রামের আব্দুল মোতালিব দেড় লাখ টাকা এবং একই গ্রামের আবুল কাসেম ১৪ লাখ টাকা রেখেছেন। গত তিন দিন ধরে চেক নিয়ে বোর্ডবাজারের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় গিয়ে কাউকে দেখতে পান না, মোবাইল নম্বরও বন্ধ।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, তাদের অনেক আত্মীয় স্বজন প্রবাসী। তাদের পাঠানো টাকা তারা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ডিপিএস হিসেবে জমা দেন। সেই টাকায় তিনি প্রতি লাখে এক হাজার টাকা সুদও পেতেন। কিন্তু রোববার থেকে শাখাটিতে তালা ঝুলিয়ে এজেন্ট উধাও।
হোসেনপুর ও আশপাশের প্রায় ৪০০ গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া এজেন্ট আলমগীর ও তার সহযোগীদের দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন হুগলকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলাম মৃধা।
ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এরিয়া ম্যানেজার রোকন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “সোমবার থেকে বোর্ড মার্কেটের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এজেন্ট আলমগীর তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেন।
রোকন উদ্দিন আরও বলেন, গ্রাহকরা ফিক্সড ডিপোজিট বা ডিপিএস অ্যাকাউন্টে টাকা রেখেছেন। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু আলমগীর তার পার্টনার ও এজেন্ট ব্যাংকিং ম্যানেজারসহ নিখোঁজ হওয়ায় গ্রাহকরা চেকটি ক্যাশ করতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, “গ্রাহকদের অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে জানান, তিনি অভিযোগ শুনেছেন। বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিখোজের পর থেকে এলাকা বাসি তাদের জমানো অর্থ ফেরত পাবার আসায় বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ধর্না দিতে ও লক্ষ করা গিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।