দুবায়ে জুয়েলার্সের উদ্বোধনে সাকিবসহ গিয়েছে অনেক নামি দামি তারকারা। সেখানে যাবার পর বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ এক তথ্য। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ হত্যা মামলার আসামির করা নিমন্ত্রনে গিয়েছেন এসব তারকারা।
বিশ্বের সেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ফেসবুকে এক ভিডিওতে জানিয়েছিলেন, জুয়েলার্সের উদ্বোধনে তিনি উপস্থিত থাকবেন। সেখানে সাকিবের উপস্থিতির পর জানা যায় ওই জুয়েলারি দোকানের মালিক হ”ত্যা মামলার পলাতক আসামি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (খিলগাঁও জোন) মোঃ শহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান পলাতক আসামি। হত্যা মামলা।
এদিকে, অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর দুবাইয়ের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাকিবের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ইন্সপেক্টর মামুন। হত্যার পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যায়। আত্মসমর্পণের জন্য রবিউল তার নামে কাউকে নিয়োগ দেন। আত্মসমর্পণের পর ভাড়াটিয়া লোকটি 9 মাস জেলে ছিল।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ। পলাতক রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমানমোল্লার ছেলে। তিনি আপন, সোহাগ ও হৃদয় নামেও পরিচিত।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, রবিউল ২০২০ সালে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান। পাসপোর্টে তার স্ত্রীর নাম সাজিমা নাসরিন লেখা আছে।
পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরভের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। পাসপোর্টের মেয়াদ 27 জুলাই, 2030 তারিখে শেষ হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আরভ এখন দুবাইতে থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার তাকে 31 অক্টোবর, 2021-এ একটি আবাসিক অনুমতি দেয়। এই পারমিটের মেয়াদ আগামী বছরের 30 অক্টোবর শেষ হবে।
ইন্সপেক্টর মামুন হত্যা: পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমতউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে ইন্সপেক্টর মামুন বনানীতে একটি জসমদিনের অনুষ্ঠানে যান। মামুন আসলে ফাঁদে পড়েছিল। তাকে একটি ফ্ল্যাটে বেঁধে, স্কচ টেপ দিয়ে মুখোশ পরিয়ে নির্দয়ভাবে মারধর করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মামুন মারা যায়।
হ”ত্যা মামলার আসামিরা হলেন- রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসা।
ডিবি সূত্র জানায়, হত্যার পর রবিউলের পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। আবু ইউসুফ 20 অক্টোবর, ২০২০ তারিখে ঢাকার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করে এবং একটি হ”ত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রতি মাসে পরিবারকে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে রাজি হন ইউসুফ।
একপর্যায়ে ইউসুফের পরিবারকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় রবিউল। পরে ইউসুফ তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করেন যে, তিনি আসলে আবু ইউসুফ, হত্যা মামলার আসামি নন।
আইনজীবী আদালতকে জানান, তার মক্কেল ইউসুফ টাকার প্রলোভন বা হুমকির কারণে এ অপরাধ করেছেন। এরপর আদালত ডিবিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্তে ডিবি জানতে পারে, ইউসুফ চাঁদপুরের কচুয়া থানার আইনপুরের বাসিন্দা এবং তার বাবার নাম মোঃ নুরুজ্জামান ও মায়ের নাম হালিমা বেগম।
ঢাকা মহানগর গোয়ান্দা (ডিবি) পুলিশ প্রধান হারুন অর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আবু ইউসুফ লিমন নামে এক যুবককে বিকেএসপিতে খেলার প্রলোভন দেয় আরভ। সেই প্রলোভনে লিমন আরভের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠান।
এই ফাঁকে আরাভ সরকারি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় জাল পাসপোর্ট তৈরি করে দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত লিমনকে খালাস দেন।
উল্লেখ্য, দুবায়ে জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হিরো আলম যত টাকা পাবে তা গরিবের মাঝে ফিরিয়ে দিবে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। তবে সেই জুয়েলারি দোকানের মালিক হ”ত্যা মামলার পলাতক আসামি জানার পর তার প্রতিক্রিয়া কি তা জানার জন্য উদগ্রীব হিরো আলোমের ভক্তরা। অন্যদিকে সাকিবের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না সাংবাদিকেরা এই নিয়েও শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষ অলরাউডার সাকিবের সাথে যোগাযোগের।