[দুটি নোবেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব—সমাবর্তনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস]

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) বলেছেন, “দুটি নোবেল পুরস্কারের পেছনে রয়েছে চবি, এই গর্ব বিশ্ববিদ্যালয়টি করতে পারে।” তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank) প্রতিষ্ঠা এবং নিজের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত কাজের শেকড় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত।

“চবির গৌরবের দুটি নোবেল”

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ড. ইউনূস বলেন, “চবি অর্থনীতি বিভাগেই গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণার গোড়াপত্তন হয়। এই ব্যাংক পরবর্তীতে নোবেল পায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে একবার এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক একবার—দুটি নোবেলই চবির সঙ্গে সম্পর্কিত।”

তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের এই ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

“শিক্ষক হয়ে এসেছিলাম, ছাত্র হয়ে গেছি”

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আসলেও পরবর্তীতে ছাত্র হয়ে গিয়েছিলাম। জোবরা, সহ্যাপাড়া, দেওয়াননগরের মহিলাদের কাছ থেকেই আমরা শিখেছি বাস্তব অর্থনীতি।”

দুর্ভিক্ষ ও তেভাগা খামারের জন্ম

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় জোবরা গ্রামে গিয়ে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ছোট পরিসরে কৃষি উদ্যোগ নেন ইউনূস। ডিপ টিউবওয়েল, বাঁধ ও জলচাষের মাধ্যমে “তেভাগা খামার” গঠন করেন যা পরবর্তীতে বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি জমি আছে, পানি আছে, কিন্তু কেউ চাষ করছে না। ইচ্ছার অভাবই সবচেয়ে বড় অভাব।”

“৫ টাকার ঋণেও আসে আনন্দ”

ড. ইউনূস বলেন, “মহিলাদের হাতে যখন ৫ বা ১০ টাকা দেই, তখন তাদের চোখেমুখে যে আনন্দ দেখি, সেটা কল্পনাও করিনি। তারা নিজের পরিচয় জানত না—আমাদের ছাত্রীদের মাধ্যমে শেখালাম নাম বলতে। যাদের নাম ছিল না, তাদের নাম দিয়েছি। দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্ন এখানেই জন্ম নিয়েছে।”

“বিশ্ববিদ্যালয় যেন গৎবাঁধা পথে না চলে”

সমাবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। নতুন অধ্যায় শুরু হয়। আমরা যে বিশ্ব চাই, তা গড়ার ক্ষমতা সবার আছে। কিন্তু গৎবাঁধা পথে চলায় আমরা নতুন পৃথিবী কল্পনা করি না। চবি যেন গবেষণা ও পাঠদান এমনভাবে চালায়, যা এই ধারণা সামনে এগিয়ে নেয়।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যারা

সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার (Dr. Muhammad Yahya Akhter)। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (Dr. Chowdhury Rafiqul Abrar) এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ (Dr. S M A Faiz)।

উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মো. কামাল উদ্দিন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।