সিটিসেল, এক সময়ে বাংলাদেশের মোবাইল জগতের সব থেকে জনপ্রিয় নাম এটি। বলতে গেলে বাংলাদেশে মোবাইল প্রবেশ করেছিল এই সিটিসেলের হাত ধরে। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে থাকে এই কোম্পানিটি। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্ধই ছিল সিটিসেল, এবার লাইসেন্সও বাতিল হল মোবাইল অপারেটরটির।আর ঠিক এর মধ্য দিয়ে সিটিসেল অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটছে, যার হাত ধরে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
পাওনা শোধ করতে না পারায় সিটিসেলের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এখন তা সিটিসেলকে জানিয়ে দেওয়ার পালা বিটিআরসির।
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি-বিটিআরসি-এর লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু বুধবার বলেন, “আমরা সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের চিঠি পেয়েছি। শিগগিরই সিটিসেলে লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাঠানো হবে।”
বিটিআরসির পাওনা ২১৮ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়, যা পরবর্তীতে মালিকানা পরিবর্তনের পরে সিটিসেল নামে পরিচিত হয়।লাইসেন্স পাওয়ার পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল-এর নতুন নামকরণ করা হয় হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)।
১৯৯৩ সালে কোম্পানির মালিকানায় আরেকটি পরিবর্তন হয়েছিল। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস এবং ফারইস্ট টেলিকম যৌথভাবে এইচবিটিএলের শেয়ার কিনেছে। কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড করা হয়েছে, সিটিসেল হিসেবে ব্র্যান্ডিং শুরু হয়েছে। পরে ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের সিংটেল এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে।প্যাসিফিক মোটরস যখন সিটিসেলকে অধিগ্রহণ করে, মোরশেদ খান তখন মন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিনিয়োগ বিষয়ক বিশেষ দূত ছিলেন। আরএইচএম এরশাদ সরকারের সময় সিটিসেল
লাইসেন্স পাওয়ার সময় জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন মোরশেদ খান।সিটিসেল দেশের একমাত্র সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল অপারেটর ছিল। ১১ জুন, ২০১৭-এ বিটিআরসি যখন সিটিসেল তরঙ্গ বন্ধ করে দেয়, তখন তা কয়েক লাখে নেমে আসে।টেলিকম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো বিনিয়োগকারীর অভাব, কারিগরি দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সিটিসেল ডুবে গেছে।
প্রসঙ্গত, সিটিসেলের জন্ম হয় অনেক আগেই। বিশেষ দক্ষিণ এশিয়ার সে সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় তিনটি মোবাইল অপারেটর এর একটি ছিল এই সিটিসেল। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে এই কোম্পানি শুরু করে ব্যবসা।এরপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। একটা সময়ে এক চেটিয়া ব্যবসা করলেও দেশে অন্যান্য সব অপারেটদের কাছে মার্ খেতে থাকে সিটিসেল। আর সেই থেকেই তাদের পতনের শুরু। শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেলো সিটিসেল।