সম্প্রতি ‘আরাভ খান’ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র রীতিমতো সারা-দেশজুড়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক শোরগোল। আসলে কে এই আরাভ খান? আর এ নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন!
এদিকে গেল দুইদিন আগেই ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ দুবাই পাড়ি জমান অনেকেই। তারপরই প্রশ্ন ওঠে কে এই স্বর্ণের দোকানের মালিক?
পুলিশ জানিয়েছে, সেই জুয়েলারির মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। তিনি বাংলাদেশের পুলিশ হত্যা মামলার আসামি।
৪ বছর আগে ঢাকায় এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন গোপালগঞ্জের রবিউল ইসলাম ওরফে আরভ খান। ওই মামলায় তার পরিবর্তে কারাগারে যান চাঁদপুরের আবু ইউসুফ লিমন। তবে তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। অন্যদিকে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আরভ খান দুবাইয়ে সুস্থ আছেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এতদিন চুপ থাকলেও অবশেষে আরভ খানের ব্যাপারে মুখ খুলল আবু ইউসুফের পরিবার।
চাঁদপুরের কচুয়া থানার সিংগড্ডা পোস্ট অফিসের অন্তর্গত আইনপুর গ্রাম। নুরুজ্জামান ও হালিমা বেগমের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। আবু ইউসুফ লিমান (২২) সবার বড়। নুরুজ্জামান কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।
ইউসুফের মা হালিমা বেগম জানান, ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করার পর আবু ইউসুফ কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যাটস-এ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সে ভর্তি হন। ৩ বছর পড়াশোনার পর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা না দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ঢাকা চলে যান। এ নিয়ে বাবা ও আমাদের ওপর রাগ করেন। এক পর্যায়ে বাবা তার খরচ চালানো বন্ধ করে দেন।
তিনি বলেন, আবু ইউসুফ ঢাকায় গিয়ে ক্রিকেট খেলার ভালো সুযোগ খুঁজতে থাকে। সেখানেই তিনি আরভের সংস্পর্শে আসেন। ইউসুফকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে ইউসুফের আইডি কার্ড-সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে যায় আরভ। পরে নথি পাওয়ার পর আরভ ইউসুফকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মামলায় কারাগারে পাঠায়।
আবু ইউসুফের মা জানান, আরভের প্রলোভনে ইউসুফ জেলে গেলেও বিষয়টি পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। এদিকে আরাভ একদিন ইউসুফের বাবাকে ফোন করে জানায়, ইউসুফকে সে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছে। ইউসুফের খেলাধুলার সমস্ত দায়িত্ব তার (আরভ)। তিনি আরও বলেন, আরভ দেড় মাসের মধ্যে ইউসুফকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিন মাস পরও খোঁজ না পাওয়ায় ইউসুফ বাড়িতে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলেন। ক্রন্দিত
ইউসুফের বাবা নুরুজ্জামান বলেন, ইউসুফ তিন মাস কারাগারে থাকার পর জানতে পারি। এরপর তার জামিন পেতে আরও ৬ মাস লেগে যায়। তিনি মোট ৯ মাস জেল খেটেছেন।
তিনি বলেন, এ মামলায় তার ছেলে জামিন পেতে গিয়ে অনেক ঋণের কবলে পড়েন।
ভুক্তভোগী আবু ইউসুফ লিমন জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে অরবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভালো জায়গায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতে আমার একটু সাপোর্ট দরকার ছিল। বাড়ি থেকে সাপোর্ট না পাওয়ায় কাজ খুঁজছিলাম। আমি আরভকে ফেসবুকে ক্রিকেটে আমার আগ্রহের কথা বলেছিলাম। এছাড়া কোন আর্থিক সহায়তা নেই, এ কথা বলি।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময় আরভ ফেসবুকে বেশি কথা বলত। তিনি বলেন, দেশে আমার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেবেন। ভালো দলে খেলার পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলেও মামলার কারণে দেশে আসতে পারছেন না তিনি। আরভ আমাকে তার পক্ষে আদালতে যেতে এবং হেফাজত পেতে অনুরোধ করেছিল, তিনি আমাকে দেড় মাসের মধ্যে জামিনে মুক্তি দেবেন। আমার ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করবে। একসময় আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই।
ইউসুফ বলেন, আরাভের কথামতো ২০শে অক্টোবর আমি ঢাকা সেন্ট্রাল মেট্রোপলিটন কোর্টে গিয়েছিলাম। কোনো কারণে সেদিনের পরদিন আমি আরভের পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করি। জেলে যাওয়ার পর আমার জামিনের চেষ্টা কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে আরভ আশ্বস্ত করেন যে ১৬ ডিসেম্বরের আগে তিনি জামিনের ব্যবস্থা করবেন। তারপর ডিসেম্বরেও তিনি আমাকে জামিন দিতে ব্যর্থ হন।
ইউসুফ বলেন, তখন আমাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এ মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
আরভ খুব শক্তিশালী উল্লেখ করে ইউসুফ বলেন, আমার মতো অনেক কম বয়সী ছেলেই আরভের ভক্ত। যেহেতু আমার আর্থিক সামর্থ্য নেই, আমি আরভের সাথে কোনো বিবাদে জড়াতে চাই না। সে চাইলে আমাকে আরো কষ্ট দিতে পারে।
আবু ইউসুফ ও তার পরিবারের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে আরভের জেলে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এদিকে আবু ইউসুফ লিমন নামে ওই যুবক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, টাকার জন্য নয় বরং নিজেকে এক খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে আরাভ খান হয়ে জেলে যেতে রাজি হয়েছিলেন তিনি।