দুবাইয়ের একটি অভিজাত এলাকায় ব্যায়বহুল স্বর্ণের দোকান চালু করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। যার কারণে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট সুপার স্টার সাকিব আল হাসানকে এবং সেই সাথে আরো কয়েকজন বিনোদন জগতের তারকাকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানান। কিন্তু এই ঘটনার পর আলোচনায় আসেন আরাভ খান। তার সম্পর্কে প্রকাশ পৎে শুরু করে নানা কর্মকান্ডের তথ্য। জানা গেছে, আরাভ খান ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও চাকরিজীবীদের ফাঁদে ফেলতেন । তার উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে টাকা আদায় করা।
এমন ফাঁদে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান বনানীর রবিউলের ফ্ল্যাটে গিয়ে খু”/ন হন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছবির একজন প্রযোজক ও রবিউল ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও নিকেতনে অনেকগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিভিন্ন লোককে আনাতেন এবং চালাতো দেহ ব্যাবসা। পুলিশ কর্মকর্তা হ”/ত্যা মামলায় জড়িয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারত হয়ে দুবাই যান রবিউল। সেখানে গিয়েও একই কাজ করছেন তিনি। ব্যবসার ছদ্মবেশে সে দেশ থেকে নারীদের নিয়ে দুবাইয়ে বিভিন্ন হোটেল ও ডান্স ক্লাবে দেহ ব্যবসা করান।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকার বনানীতে রবিউল ও এক প্রযোজকের ভাড়ার ফ্ল্যাটে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন খু”/ন হন। তারা তাকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। না পেরে রবিউল ও তার সহযোগীরা তাকে হ”/ত্যা করে। পরে রবিউলের আনা বস্তায় ভরে গাজীপুরের একটি জঙ্গলে নিয়ে পোড়ানো হয় মামুনের লাশ।
ঘটনার তিন দিন পর খু”/ন হওয়া পুলিশ কর্মকর্তার ভাই বাদী হয়ে হ”/ত্যা মামলা করেন।
মামলার আগে নি”/হতের পরিবার ঢাকার সবুজবাগ থানায় মামুন নিখোঁজ হয়েছেন এই মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। বনানী এলাকায় এই খু”/নের ঘটনা ঘটলেও মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবির খিলগাঁও টিমকে। এ সময় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ঘটনা নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামুন হ”/ত্যার ঘটনায় ওই সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে গ্রে”প্তার করেছিল। কিন্তু তিন দিন আটক থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার না দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সূত্রটি আরও জানায়, ক্ষমতাসীন দলের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা ও তৎকালীন একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের অনুরোধে ডিবি তাকে ছেড়ে দেয়।
কর্মকর্তারা আরও জানান, বনানীর যে ফ্ল্যাটে পুলিশ কর্মকর্তা নি”/হত হয়েছেন সেখানে রবিউলের কোনো অফিস ছিল না। তিনি কখনই ব্যবসায়ী ছিলেন না। রবিউল মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজি করত। রবিউল এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক যে চক্রটি গড়ে তোলেন, উঠতি মডেল ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারাও ছিলেন। মামুন হ”/ত্যা মামলায় পুলিশ যে আটজনকে গ্রে”প্তার করেছে, তাদের মধ্যে আতিকসহ তিনজন ছিলেন একটি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। মামলার চার্জশিটে তাদের নাম থাকলেও তারা কোন বাহিনীর সদস্য তা উল্লেখ করা হয়নি।
তদন্তের সঙ্গে জড়িত একজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ=রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে র্যাবের অভিযানে ২০২১ সালের আগস্টে অভিনেত্রী পরীমনি ও মডেল পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় এক প্রযোজককে আটক করা হয়। ওই প্রযোজকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সম্পর্ক ছিল। প্রযোজকের সুপারিশে নেতা রবিউলকে মুক্তি দিতে তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে রবিউলকে ছেড়ে দেয় ডিবি।
জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, আমি তখন ডিবিতে ছিলাম না।
তখন ডিবির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল বাতেন গতকাল বলেন, ‘পুলিশ খু”/নের ঘটনাটি আমি মনে করতে পারছি। কিন্তু খু”/নের ঘটনায় কাউকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’
সম্প্রতি দেশের ক্রীড়া ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের কয়েকজন তারকা দুবাইয়ের রবিউলে আরভ জুয়েলার্স নামের স্বর্নের দোকান উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। তারকারা খু”/নের আসা”মিদের দোকান খুলতে যাওয়া নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। রবিউলের স্বর্ণ ব্যবসায় কোনো বিনিয়োগ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে ডিবি। এছাড়া তিনি কোন দেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে আসতেন তা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা।
রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সে বিষয়গুলি সম্পর্কে তদন্ত করা হবে। তবে প্রথমত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হবে। এদিকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর আরাভের মতো একজন আসামির বিষয় সামনে এলো। কিন্তু তার বিষয়ে কেন প্রশাসন নীরব ছিল সে বিসয়টি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।