জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Professor Ali Riaz) বলেছেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠন কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি বা সংগঠনের বিষয় নয়; এটি মূলত জনগণের বিষয়। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (Bangladesh Socialist Party-BASAD) এর সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।
ঐকমত্য তৈরির গুরুত্ব
আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হলো একটি সর্বজনগ্রাহ্য ঐকমত্য তৈরি করা। এটি কেবল কমিশনের একক দায়িত্ব নয়, বরং কমিশন একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।” তিনি জানান, জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সনদের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা সুসংগঠিতভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
৩৩ দলের সঙ্গে সংলাপ, মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক
তিনি জানান, কমিশনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অনেক বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও কিছু বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে—যা স্বাভাবিক। প্রত্যেক দল তাদের আদর্শ, পরিকল্পনা ও অবস্থান বজায় রেখেই রাষ্ট্র গঠনে অংশগ্রহণ করবে, তবে প্রয়োজন একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
জনগণের সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্বের আহ্বান
আলী রীয়াজ বলেন, “রাষ্ট্র পুনর্গঠন কোনো দল বা ব্যক্তির একক মালিকানা নয়, এটি জনগণের বিষয়। রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি দলকে তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে জনগণের কাছে যেতে হবে এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু বিষয়ে ছাড় দিয়ে অগ্রসর হতে হবে।”
ঐতিহাসিক মুহূর্তে দ্রুত সিদ্ধান্তের তাগিদ
তিনি বলেন, “এখন আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে অবস্থান করছি। তাই যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তা দ্রুত ও গভীরভাবে আলোচনা করে সমাধানের পথে এগোতে হবে।” জাতীয় সনদের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশাও জানান তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
আলী রীয়াজ বলেন, “বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ফল। জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রকাশ।” তিনি বলেন, “এবার এমন রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগোতে হবে যেখানে নাগরিকদের সমান অধিকার থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।”
সংলাপে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার (Monir Haider)। আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন (Safar Raj Hossain), বিচারপতি এমদাদুল হক (Justice Emdadul Haque), ড. বদিউল আলম মজুমদার (Dr. Badiul Alam Majumdar), ড. ইফতেখারুজ্জামান (Dr. Iftekharuzzaman) এবং ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া (Dr. Mohammad Ayub Miah)।