আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কান্ডারি হিসেবে বিবেচিত সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র (United States)ের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি (Washington D.C.)র ইউএস সিটিজেনশিপ সেন্টারে আয়োজিত শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। এর ফলে আওয়ামী লীগ (Awami League)র তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চূড়ান্ত হতাশা ও দিগ্ভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দল নিষিদ্ধ, নেতাদের অনুপস্থিতি
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকার পতন ঘটে। ওইদিনই তিনি ভারতে পালিয়ে যান। শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হন, আবার অনেকে পালিয়ে যান। পরিস্থিতির জেরে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে, তৃণমূল কর্মীরা মার খাচ্ছেন, গ্রেফতার হচ্ছেন—এরকম পরিস্থিতিতে জয়ের বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণকে নেতাকর্মীরা দলের ‘চূড়ান্ত নৌকাডুবি’ হিসেবে দেখছেন।
উত্তরাধিকার রাজনীতি ও জয়ের ভূমিকা
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে জয়কেই এগিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা করে, সদস্য পদ দিয়ে ও বিভিন্ন ভাষণে দলের ভবিষ্যৎ কান্ডারিরূপে উপস্থাপন করা হতো। ‘জয়ের কোটা’য় মন্ত্রী, এমপি হওয়ার কথাও প্রচলিত ছিল।
আইসিটি সহ আরও কিছু খাত জয় ও তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনেও জয়ের অনুসারী একটি গ্রুপ ছিল বিশেষ আলোচনায়। এসবই ইঙ্গিত করতো যে জয়ই ভবিষ্যতের নেতা। ৫ আগস্টের পতনের পরও একমাত্র জয়ই গণমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন, ফলে নেতাকর্মীরা ধরে নিয়েছিলেন তিনিই হাল ধরবেন।
নাগরিকত্ব শপথ ও অতীত বক্তব্য
ওয়াশিংটনের ইউএস সিটিজেনশিপ সেন্টারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ২২ জন নাগরিকের মধ্যে জয় ছিলেন অন্যতম। তিনি বাংলাদেশি হিসেবে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে শপথ নেন। শপথ শেষে তাকে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হয় এবং তিনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।
তবে ২০১৮ সালে নিজের ফেসবুক পেজে জয় লিখেছিলেন, তার কোনো বিদেশি পাসপোর্ট নেই, তিনি এখনো বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। সে সময় বলেছিলেন, “আমার পরিচয় বাংলাদেশি নাগরিক।”
দলের নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
অনেক নেতাকর্মী বলেছেন, দুঃসময়ে দলের কান্ডারি হয়ে দাঁড়ানো উচিত ছিল জয়ের। কিন্তু বিপরীতে তিনি বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে সবাইকে হতাশ করলেন। দলের এমন ভাঙনের মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।