অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government)–এর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। তিনি মনে করেন, বর্তমান আকারে এই বন্দর দিয়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়—এটির ‘চিকিৎসা’ প্রয়োজন, এবং তা বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করতে হবে।
চট্টগ্রাম সফরে ইউনূসের পর্যবেক্ষণ
১৪ মে (বুধবার) চট্টগ্রাম সফরকালে বন্দর পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “একটি ছোট হৃদপিণ্ড দিয়ে বড় দেহ চলে না, যেমন তেমনি এই ছোট বন্দরের মাধ্যমে বড় অর্থনীতি চলতে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরকে হতে হবে বিশ্বমানের।” ১৫ মে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া বিবৃতিতে এসব কথা উঠে আসে।
বিদেশি পরিচালনার প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জনমনে থাকা আশঙ্কা প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, “আপনারা তো বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান, কারণ দেশে ভালো চিকিৎসা নেই। সেরা চিকিৎসা যারা দিতে পারে, তাদের দ্বারস্থ হওয়া অন্যায় নয়।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আমরা ভাবছি, তারা শত শত বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা রাখে। তারা আমাদের মতো করে বন্দর পরিচালনা করবে না—তারা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি আর দক্ষতা দিয়ে এটি গড়ে তুলবে।” ইউনূস আশ্বস্ত করে বলেন, মেয়াদ শেষে বন্দর আবার দেশের হাতে ফিরে আসবে, তবে তখন তা হবে একটি আধুনিক, উন্নত পোর্ট।
চাকরি হারানোর আশঙ্কা অমূলক: ইউনূস
দেশি শ্রমিকদের চাকরি হারানো নিয়ে যে আশঙ্কা রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়ে ইউনূস বলেন, “ওরা তো ইউরোপ থেকে লোক এনে বন্দর চালাবে না। এখানকার লোক দিয়েই চালাতে হবে। আমাদের শ্রমিকরাই শিখে দ্রুত দক্ষ হয়ে উঠবে, আর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বিদেশি বন্দরের দায়িত্বও নিতে পারবে।”
তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “৩১ সালের মধ্যে যদি আমরা শিখে যাই, ৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বহু বন্দরে বাংলাদেশিরা কাজ করবে। সিংহভাগ নাবিক যেমন চট্টগ্রাম বা সিলেট (Sylhet)–এর, তেমনি ভবিষ্যতে বিশ্বের বন্দরে দেখা যাবে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল (Barishal)–এর দক্ষ বাঙালিরা কাজ করছেন।”
টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রস্তুতি ও নির্দেশনা
বর্তমান পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনাল, বিশেষ করে লালদিয়ার চর (Laldia Char) এবং বে টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। নিউমুরিং টার্মিনালের (NCT) ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অংশীদার যুক্ত হওয়ার বিষয়ে শ্রমিক ও স্থানীয় অপারেটরদের আপত্তি থাকলেও, ইউনূস স্পষ্ট করেন—“রাজি করিয়ে হলেও এই উন্নয়ন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমি নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে বলে দিয়েছি—আর কোনো দেরি নয়। যারা বিশ্বের সেরা বন্দর পরিচালনা করে, তাদের দিয়েই কাজ করাতে হবে।”