সীমান্তে পুশইন নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ: সতর্ক অবস্থানে বিজিবি, ভারতের পদক্ষেপে প্রশ্ন

সিলেট ও মৌলভীবাজারসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (BSF) একের পর এক পুশইন ঘটিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে শত শত মানুষকে। গত দুই দিনে কেবল মৌলভীবাজার (Moulvibazar) সীমান্ত দিয়েই ৫৮ জনকে পুশইন করেছে তারা। এর জেরে উদ্বেগ বেড়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) (Border Guard Bangladesh (BGB))-এর মধ্যে, যারা বর্তমানে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

সীমান্তে নতুন বাস্তবতা

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া (Kulaura), বড়লেখা, কানাইঘাট (Kanaighat)সহ একাধিক সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে নারী-পুরুষ-শিশুদের ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। আটককৃতদের অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রাম ও যশোরে। দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস করার পর তাদের ধরপাকড় করে বিএসএফ সীমান্তে নিয়ে এসে ঠেলে পাঠাচ্ছে বলে জানানো হয়।

৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম জাকারিয়া বলেন, “ভারতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশিদের ধরে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং পরে সীমান্তে পুশইন করা হচ্ছে।”

মেঘালয়ে ১৪৪ ধারা ও সীমান্ত জটিলতা

মেঘালয় (Meghalaya) রাজ্যের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ রয়েছে। এতে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে।

৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, “আমরা সীমান্তে নজরদারি ও টহল জোরদার করেছি। ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে।”

আইনবহির্ভূত প্রক্রিয়ার অভিযোগ

বিবিসি বাংলা (BBC Bangla) এক প্রতিবেদনে জানায়, পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন ভারতের কোনো স্বীকৃত আইনি প্রক্রিয়া নয়। মানবাধিকার সংগঠন মাসুম (MASUM)-এর প্রধান কিরীটী রায় (Kirity Roy) বলেন, “আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে মামলা করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে, ভারতে ধরা পড়া বাংলাদেশিদের আদালতে না নিয়ে সরাসরি সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যা একেবারেই সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।”

গুজরাত ও রাজস্থানে ধরপাকড়

গুজরাত (Gujarat) ও রাজস্থান (Rajasthan) রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশি সন্দেহে হাজারের বেশি মানুষ চিহ্নিত করেছে এবং তাদের মধ্যে অনেককে সরাসরি সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, আদালতের মাধ্যমে ফেরত পাঠাতে সময় ও জায়গার সংকট দেখা দেয়, তাই বিকল্প হিসেবে সরাসরি পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে কূটনৈতিক পদক্ষেপের আহ্বান

সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অবৈধ পুশইন ঠেকাতে প্রয়োজন শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি তুলে ধরা। বিজিবি পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় থাকলেও এই সংকট সমাধানে আইনি ও কূটনৈতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপই হতে পারে স্থায়ী সমাধান।