‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শিল্পচিত্রভিত্তিক ঐতিহাসিক দলিল

জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ (The Art of Triumph)’ প্রকাশিত হয়েছে একটি সচিত্র দলিল হিসেবে। এটি শুধু গ্রাফিতি নয়, বরং একটি বিপ্লবের শিল্পভাষ্য।

মূলত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন (July Smriti Foundation) এর উদ্যোগে প্রকাশিত বইটি দেশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরে। গ্রন্থটি উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বহু নেতার হাতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (Chief Adviser to the Interim Government) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এটি উপহার দেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden), কানাডার প্রধানমন্ত্রী (Canadian Prime Minister) জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau), জাতিসংঘ মহাসচিব (UN Secretary-General) এবং কানাডার প্রেসিডেন্ট (President of Canada) সহ বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে।

বইয়ের মূল বিষয়বস্তু

প্রযোজক শায়ান সিরাজ (Shayan Siraj) জানান, বইটিতে রয়েছে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্র—যেমন শহীদ আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর দৃশ্য, শহীদ মীর মুগ্ধের পানি বিতরণের মুহূর্ত, এবং দেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। এই চিত্রগুলোর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ছাত্র-জনতার সাহসিকতা ও প্রতিবাদ।

এছাড়া গ্রাফিতিতে স্থান পেয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, ধর্মীয় সহাবস্থান, পশু-পাখির অধিকার ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্নচিত্রও। কিছু ছবির পাশে সংযুক্ত কিউআর কোড স্ক্যান করলে সংশ্লিষ্ট ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়—যা একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উপস্থাপন।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামের উৎপত্তি

বইয়ের নাম নির্বাচন নিয়ে শায়ান জানান, আলোচনা করে সবাই একমত হন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামেই। এর অর্থ, ‘বিজয়ের শিল্প’—যা প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিজয়ের।

প্রকাশের পেছনের গল্প

এই বই তৈরির ধারণা আসে ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরের প্রস্তুতিকালে। তাঁর বন্ধু আনিস জামানের মাধ্যমে প্রস্তাব আসে—গ্রাফিতিকে কেন্দ্র করে একটি উপহার তৈরির। এরপর শায়ান, তার স্ত্রী তাজরিনা মান্নান শিরাজ (Tazreena Mannan Shiraj), আনিস জামান ও তৌফিক বারি বই তৈরির পরিকল্পনা শুরু করেন।

মোর্শেদ মিশু (Morshed Mishu) ও তার ভাই অভিজিৎ (Abhijit) সারাদেশ থেকে গ্রাফিতির ছবি সংগ্রহ করেন, বিশেষ করে ঢাকা (Dhaka), গাজীপুর (Gazipur), চট্টগ্রাম (Chattogram), বরিশাল (Barishal) ও খুলনা (Khulna) থেকে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের চিত্র

প্রথম সংস্করণে তৈরি হওয়া ৩০০ কপি বই ড. ইউনূস তুলে দেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ও ফোর্বস ফিলানথ্রপি সামিটে। পরবর্তীতে আরও উন্নত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়, যাতে কাগজ, কভার ও ডিজাইনে মানোন্নয়ন আনা হয়।

সংগ্রহের উপায়

বইটি এখন রকমারি.কম এবং ‘বুক ওয়ারম’ (শাহাবুদ্দিন পার্ক) থেকে সংগ্রহ করা যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শায়ান মনে করেন, স্ট্রিট আর্টকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরলে এটি শিল্প ও পর্যটন উভয় খাতেই অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেন, “সরকার চাইলে পুরো ঢাকাকে গ্রাফিতির আওতায় এনে সৌন্দর্য ও বার্তা—দুটোই ছড়িয়ে দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, তরুণদের উদ্যম আজ প্রেরণাদায়ী। “তরুণরা যদি ভালো কাজে নিয়োজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।”

মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা

শায়ান স্পষ্ট করে বলেন, “এই প্রজেক্ট থেকে আমরা কোনো টাকা নেইনি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। শুধুই ইতিহাস সংরক্ষণ ও তুলে ধরার প্রচেষ্টা। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পারায় গর্বিত।”