প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হ”ত্যার হু”মকির অভিযোগে অভিযুক্ত রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় বিএনপি। তাকে দল থেকে বহিষ্কার বা পদ থেকে অপসারণ করা হতে পারে। তাকে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপ বাড়ছে।
বিএনপির সমাবেশে আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্যের দায়ভার দল নেবে না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা।
চাঁদের বিতর্কিত বক্তব্যকে ব্যক্তিগত দাবি করে তিনি বলেন, চাঁদের বক্তব্য কোনোভাবেই বিএনপির দলীয় বক্তব্য নয়। চাঁদের বক্তব্যের দায় নেবে না দল। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আইন চলবে তার নিজস্ব গতিতে। চাঁদের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আপনি যা করবেন, কেন্দ্র তা করবে। কারণ জেলা বা মহানগর বিএনপির এ বিষয়ে কিছু করার নেই।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “চাঁদ একজনকে উদ্দেশ্য করে বিবৃতি দিয়েছেন, যা বিএনপির বক্তব্য নয়। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। কোনো বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। বিএনপির দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়েছে।” এই সময়ে চান্দের এমন বক্তব্যে আমরা বিব্রত।আমরা ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছি।আন্দোলন বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হোক তা আমরা চাই না।’
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের পর থেকে চাঁদ পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে সোমবার রাতে রাজশাহী জেলা পুলিশের চারটি দল সম্ভাব্য নয়টি স্থানে অভিযান চালায়।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে চাঁদ ধামাচাপা দিয়ে আসছে। আমরা তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা ইতিমধ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের চান্দের বক্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে চান্দের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। আবু সাঈদ চাঁদের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র কয়েকদিন সময় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা বিএনপির এই নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতার ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্র চাঁদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিলেও রাসিকের সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। মিনুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতাদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও গত ৫ জুলাই আবু সাইদ চাঁদকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির কমিটি দেওয়া হয়। কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
রাজশাহী জেলা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক পরিমল কুমার চক্রবর্তী জানান, বিএনপি নেতা আবু সাঈদের বিরুদ্ধে বর্তমানে আদালতে ১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সবাই দৌড়াচ্ছে। আরও ২০টির বেশি মামলা ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে।
আদালত সূত্র আরও জানায়, গত জুলাইয়ে বিএনপির একটি কর্মসূচি থেকে আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননাকর বক্তব্য দেন। এ ঘটনায় গত বছরের ২৬ জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাবলু সরকার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেলে ছিলেন।