Friday , June 9 2023
Breaking News
Home / Exclusive / সাহস করে ড্রাইভারকে লাথি মেরে ওদের ধরেছি, বাহবা পেয়ে ভালোই লাগছে: রোকসানা বেগম

সাহস করে ড্রাইভারকে লাথি মেরে ওদের ধরেছি, বাহবা পেয়ে ভালোই লাগছে: রোকসানা বেগম

রোকসানা বেগম (৩২) দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই পড়াশুনা নেই। কিছু আরবি শেখার পর ইজিবাইক চালক আব্দুল মজিদের (৩৭) সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঘোষপালা গ্রামে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার।

মা রোকসানার বড় মেয়ে পলি আক্তার (১৫) ও তাহমিনা (৬) মাদ্রাসায় পড়ছে। আবু হুরায়রার ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর।

প্রায় এক মাস আগে রোকসানা তার ছোট মেয়ের চিকিৎসার জন্য নান্দেল উপজেলা হাসপাতালে গেলে দুই নারী তাকে ছিনতাই করে। তারা স্বর্ণের দুল ও নগদ আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর পরই প্রতিজ্ঞা করেন, একদিন না একদিন ছিনতাইকারীদের ধরবেনই তিনি।

গত সোমবার নান্দাইল সদর বাজারে অবস্থিত মদিনা লাইব্রেরিতে বড় মেয়ের জন্য বই কিনতে যান রোকসানা। বেলা ১১টার দিকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দোকানের কাছে একটি অটোরিকশায় তার কানের দুল ছিনতাইকারী দুই মহিলাকে তিনি দেখতে পান। বোরকা দিয়ে মুখ ঢেকে সে অটোরিকশার কাছে আসে এবং জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে চালক অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতে চায়। এরপর রোকসানা চালককে লাথি মেরে চিৎকার করতে থাকে। লোকজন আসার আগেই চালকসহ অন্যরা পালিয়ে গেলেও সাজিদা আক্তার (২২) নামে এক ডাকাত ধরা পড়ে। পুলিশ গিয়ে সাজিদা ও অটোরিকশাটিকে থানায় নিয়ে যায়। সাহসী নারী হিসেবে এলাকায় রোকসানার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার সকালে ঘোসপালা গ্রামে স্বামীর বাড়িতে গেলে রোকসানাকে পাওয়া যায়নি। তিনি নান্দাইল পৌর সদরের দক্ষিণ চণ্ডীপাশা মহল্লায় বাবার বাড়িতে ছিলেন। সেখানে গেলে প্রতিনিধি রোকসানার সঙ্গে কথা বলেন।

সমকাল: আপনার পুরো নাম?

রোকসানা: কেউ আমাকে রোকসানা আক্তার, কেউ আমাকে রোকসানা বেগম বলে ডাকে। কাগজপত্রে নাম লেখা নেই।

সমকাল : কতটুকু পড়াশুনা করেছেন?

রোকসানা: বাবা গরিব। তাই বাংলা লাইনে পড়তে পারিনি। কিন্তু আমি মসজিদে গিয়ে কিছু আরবি শিখেছি।

সমকাল: কত বয়সে বিয়ে করেন?

রোকসানা: ১৬-১৭ বছর বয়সে।

সমকাল : আপনি যা করেছেন নিঃসন্দেহে প্রতিবাদ। প্রতিবাদ করার মানসিকতা কবে থেকে?

রোকসানা: যেদিন থেকে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে  আমার কানের দুল ও নগদ টাকা নিয়ে গেছে, আমি সেই দুই মহিলাকে একদিন না একদিন ধরার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। গতকাল (সোমবার) সেই সুযোগ পেয়েছি। সাহস করে ড্রাইভারকে লাথি মেরে একজনকে ধরে ফেললাম। দুঃখিত, তাদের সব ধরতে পারেনি.

সমকাল: আপনি কি থানায় গেছেন?

রোকসানা: হ্যাঁ, সেখানে যাওয়ার পর আমাকে বাদী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ তাই রাজি হইনি। কিন্তু যাই হোক, আমি আমার কানের দুল এবং টাকা ফেরত চাই।

সমকাল : আপনার সন্তানদের বিদ্রোহী হতে শেখাবেন?

রোকসানা: হ্যাঁ, তাই আমি মাদরাসায় পড়তে দিয়েছি।

সমকাল : বাল্যবিবাহ নিয়ে কী ভাবছেন?

রোকসানা: আমি চাই সব মেয়ে স্বাধীন হয়ে বিয়ে করুক। আমি আমার মেয়েদের বাল্যবিবাহ দেব না। সেজন্য আমি এখনো বড় মেয়েকে পড়াচ্ছি।

সমকাল: আপনি সাহসিকতা দেখিয়েছেন, এখন কেমন লাগছে?

রোকসানা: অনেকেই জানেন না, যারা জানেন তারা বাড়িতে এসে উল্লাস করেন। ভালো লাগছে

সমকাল: ধন্যবাদ।

রোকসানা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

About Babu

Check Also

পরীক্ষা-নিরীক্ষার অজুহাতে খারাপ কাজ, ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন কলেজছাত্রী

খুলনা মহানগরীর কেডিএ এভিনিউস্থ শেখপাড়া এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডে এক তরুণী রোগীকে যৌ”ন নি’র্যাতনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *