সনদ জাল করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়া ৬৭৮ শিক্ষককে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এসব শিক্ষকের বেতন বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাসহ সাত দফা শাস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৮ মে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও মঙ্গলবার তা প্রকাশ্যে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এর আগে সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে মোট ১৫৭৭ জনকে তদন্ত করে শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে ৬৭৮ জনকে শাস্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিষয়টি রহস্যজনক কারণে উঠে আসেনি। তবে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মন্ত্রণালয় ‘নিরাপরাধ’ বলে খালাস দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিআইএ যাদের চিহ্নিত করেছিল তারা সরকারের প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা বেতন-ভাতা হিসাবে গ্রহণ করেছে। টাকা আদায়ের জন্য তাদের প্রতিবেদনগুলোতে সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা) মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর যাচাই-বাছাই করে ৬৭৮ জন শিক্ষক/কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত করেছে। এ অবস্থায় ভুয়া সনদধারী ৬৭৮ শিক্ষক/কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হলো- এমপিও বন্ধ ও বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ভুয়া সনদপ্রাপ্ত শিক্ষক/কর্মচারীদের বরখাস্ত করা। অবৈধভাবে গৃহীত বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ। যারা অবসর নিয়েছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল। যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সনদধারী শিক্ষক/কর্মচারীদের অবসর ভাতা/কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সনদধারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা। জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুয়া সনদধারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রসঙ্গত, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ সালে যুগান্তর ‘১৫৭৭ জাল সার্টিফিকেটে নিয়োগ: ভুয়া শিক্ষকদের পকেটে ২৬.৫ মিলিয়ন টাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, ডিআইএ কর্তৃক চিহ্নিত ১৫৭৭ জন শিক্ষকের মধ্যে কেউ কেউ তাদের নিবন্ধন সনদ জাল করেছেন এবং অন্যরা বিভিন্ন স্তরের একাডেমিক, ডিপ্লোমা ও পেশাগত সনদ জাল করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় চাকরি নিয়েছেন। এসব শিক্ষক সরকারি কোষাগার থেকে এমপিও হিসেবে নিয়েছেন ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করে এই তথ্য বের করেছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে আসছে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিত। অবশ্য ওইসব নিয়োগ বোর্ডে সরকারি প্রতিনিধি ছিলেন। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগের আগে তার নথিপত্র স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে যাচাই করা উচিত।
এছাড়া এসব শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলে তাদের কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) যাচাই করার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, এত কিছুর পরও কীভাবে জাল সনদে নিয়োগসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ অপকর্মের পেছনে শিক্ষা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রত্যয়ন সংস্থা এনটিআরসিএ, মাউশি ও মন্ত্রণালয়ে একটি চক্র রয়েছে। তারা একে অপরের সাথে যোগসাজশ করে ভুয়া সনদধারীদের রক্ষা করছে। অন্যদিকে প্রয়োজনে জাল সার্টিফিকেট পেতেও সাহায্য করেছে।