বিএনপিকে পরোক্ষ বার্তা দিল এনসিপি, রাজনৈতিক মঞ্চে শক্ত অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party – NCP) সম্প্রতি আওয়ামী লীগের (Awami League) কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত উদযাপন করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঢাকার কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড়, মিষ্টিমুখ, এবং নেতৃবৃন্দের ভাষণ ছিল তার প্রমাণ। এতে এনসিপি যেন নিজেদের একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছে।

বিএনপির প্রতি বার্তা?

আন্দোলনে বিএনপি (BNP)র অনুপস্থিতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কেড়েছে। অনেকের মতে, আন্দোলনে অংশ না নিয়েও এনসিপির এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিএনপিকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে— রাজনৈতিক দাবি আদায়ে এককভাবে মাঠে নামা সম্ভব।

এনসিপির আত্মপ্রকাশ ও রাজনৈতিক ভুমিকা

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউ (Manik Mia Avenue)তে এনসিপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও দলটি শুরুর দিকে খুব একটা রাজনৈতিক চমক দেখাতে পারেনি। দলীয় অভ্যন্তরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, সমন্বয়হীনতা এবং অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সেই অবস্থান থেকে এবার তারা প্রথমবারের মতো একটি বড় দাবিতে সাফল্য পেয়েছে।

‘ঐক্যের’ চেষ্টা এবং আন্দোলনের ফলাফল

দলটির অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah)র হঠাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বসে পড়া আন্দোলনের সূচনা ঘটায়। এরপর জামায়াত, হেফাজতসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল যোগ দিলে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং দ্রুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন (Monira Sharmin) বলেন, “এই আন্দোলনের মাধ্যমে এনসিপি প্রমাণ করতে পেরেছে, আমরা মাঠে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি। দেশের বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে পেরেছি।”

সামনে কী করবে এনসিপি?

আখতার হোসেন (Akhtar Hossain), এনসিপির সদস্য সচিব, জানান— দলটি এখন সরকারের “জুলাই ঘোষণাপত্র” বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রক্রিয়া ঢিমেতালে চলছে বলে দলটির অভিযোগ। প্রয়োজনে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচন, সংবিধান পুনর্লিখন এবং সংস্কার ইস্যুতে এনসিপি সক্রিয় থাকবে।”

সামনে চ্যালেঞ্জ কেমন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ (Dr. Sabbir Ahmed), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka)র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, বলেন— “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থানে ঐক্য করা যতটা সহজ, সংবিধান বা গণপরিষদ ইস্যুতে ঐক্য করা ততটাই কঠিন।”

তাঁর মতে, সংবিধান ও সংস্কারের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে যদি আলোচনা ছাড়া আন্দোলন হয়, তাহলে রাজনীতিতে সংঘর্ষ বাড়তে পারে।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (Syed Moazzem Hossain Alal) বলেন, “হঠাৎ করে মঞ্চ তৈরি, গাড়ির শোভাযাত্রা— এগুলো কার সহযোগিতায় হয়, জনগণের অধিকার জানার আছে।”

তিনি আরও বলেন, “আন্দোলন যেন জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে দেওয়ার হাতিয়ার না হয়ে ওঠে।”

উপসংহার

আন্দোলনের মাধ্যমে এনসিপি নিজেদের প্রভাবিত দল হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। তবে সামনের দিনে নির্বাচন, সংস্কার ও সংবিধান ইস্যুতে তারা কতটা সফল হয়, সেটিই তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির প্রকৃত পরীক্ষা হয়ে থাকবে।